২ লাখ ২৭২১ কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন

অনুমোদন পেল আগামী অর্থবছরের (২০১৯-২০) ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)। এর ফলে প্রথমবারের মতো ২ লাখ কোটি টাকার ঘর ছাড়াল এডিপি। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার ৯২১ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর বাইরে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বরাদ্দ ১২ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে মঙ্গলবার এ অনুমোদন দেয়া হয়।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। নতুন এডিপিতে পদ্মা সেতু ও এর রেলসংযোগসহ গুরুত্ব বিবেচনায় সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে পরিবহন খাতে। আর মন্ত্রণালয় হিসেবে সর্বোচ্চ ২৯ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা সচিব নূরুল আমিন, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য শামীমা নার্গিসসহ কমিশনের অন্য সদস্যরা।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাওয়ায় বেসরকারি বিনিয়োগ সংকুচিত হচ্ছে কিনা- একনেকে এমন প্রসঙ্গ উঠলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগে কোনো বাধা নেই। শুধু মাদক ও অস্ত্র তৈরি খাত ছাড়া সব খাতেই বেসরকারি উদ্যোক্তরা বিনিয়োগ করতে পারবেন। তাছাড়া এখন অর্থনীতির আকার বাড়ছে। বিনিয়োগের সুযোগ অবারিত হচ্ছে। সেখানে সংকুচিত হবে কেন? বরং সরকারি বিনিয়োগ হলে বেসরকারি বিনিয়োগ আরও বাড়বে।
পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী গবেষণা বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছেন। তাছাড়া যেসব প্রকল্প সমাপ্ত হচ্ছে না, সেগুলো কেন এমন হচ্ছে তা খতিয়ে দেখতে বলেছেন। প্রয়োজনে সহায়তা দিয়ে হলেও সমাপ্ত করার ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। সেই সঙ্গে প্রকল্পের নামে অহেতুক ও অতিরিক্ত জমি নেয়া যাবে না। ফসলি জমিতে হাত দেয়া যাবে না।
এছাড়া চট্টগ্রাম অঞ্চলের জন্য যত টাকা ব্যয় হয় তার মোট হিসাব প্রকাশ করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, যাতে মানুষ বুঝতে পারে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বাইরেও অনেক ব্যয় হচ্ছে। সরকারি অফিসগুলোকে বিভিন্ন বকেয়া বিল পরিশোধের তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের মূল এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। সে তুলনায় নতুন অর্থবছরের এডিপির আকার বাড়ছে ১৭ দশমিক ১৮ শতাংশ। তবে বরাদ্দ কমিয়ে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপি ধরা হয় ১ লাখ ৬৭ হাজার কোটি টাকা। এর তুলনায় নতুন এডিপিতে বরাদ্দ বাড়ছে ২১ দশমিক ৩৯ শতাংশ।
সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ৫ খাত : এডিপিতে খাতভিত্তিক বরাদ্দের সর্বোচ্চ বরাদ্দ ধরা হয়েছে পরিহনে। এ খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৫২ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা, যা এডিপির ২৬ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। বিদ্যুৎ খাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২৬ হাজার ১৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা, এডিপির ১২ দশমিক ৮৩ শতাংশ। ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাতে তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২৪ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা, এডিপির ১২ শতাংশ। শিক্ষা ও ধর্ম খাতে চতুর্থ সর্বোচ্চ বরাদ্দ ২১ হাজার ৩৭৯ কোটি ১২ লাখ টাকা, এডিপির ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ। বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে পঞ্চম সর্বোচ্চ বরাদ্দ ১৭ হাজার ৫৪১ কোটি ২৬ লাখ টাকা, এডিপির ৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ৫ মন্ত্রণালয় : মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ বরাদ্দ স্থানীয় সরকার বিভাগ ২৯ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা। দ্বিতীয় বিদ্যুৎ বিভাগ ২৬ হাজার ১৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। তৃতীয় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ২৫ হাজার ১৬৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ১৫ হাজার ৯০৮ কোটি ৪৭ লাখ টাকা এবং রেলপথ মন্ত্রণালয় ১২ হাজার ৫৯৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে।
এডিপিতে যত প্রকল্প : এডিপিতে প্রকল্প রয়েছে ১ হাজার ৫৬৪টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ১ হাজার ৩৫৮টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১১৬টি, জেডিসিএফ প্রকল্প ১টি এবং স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার নিজস্ব প্রকল্প ৮৯টি। অন্যদিকে সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত প্রকল্প ধরা হয়েছে ৩৫৫টি। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) প্রকল্প ৬২টি। বৈদেশিক সাহায্য প্রাপ্তির সুবিধার্থে বরাদ্দহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প ২৪২টি এবং বরাদ্দহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প ১ হাজার ৪৫টি। এছাড়া বরাদ্দসহ অনুমোদিত নতুন প্রকল্প ৪১টি।
মেগা ৯ প্রকল্পে বরাদ্দ : এডিপিতে মেগা ৯টি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৩৫ হাজার ৩১৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১২ হাজার ৫২২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ২২ হাজার ৭৯৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। সর্বোচ্চ ১৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা পাচ্ছে রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ মেট্রোরেলের, তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে পদ্মা সেতু প্রকল্পে। অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে- কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনায় প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প এবং দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হতে মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প। ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, সাপোর্ট টু ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পিপিপি প্রজেক্ট এবং মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প।
গত ১০ মাসের এডিপির অগ্রগতি : ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ৫৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এ সময় ব্যয় হয়েছে ৯৭ হাজার ৩০ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছিল ৫২ দশমিক ৪২ শতাংশ, ব্যয় হয়েছিল ৮২ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা।
Add Comment