স্পিডবোট ও ট্রলারের রমরমা বাণিজ্য

ঘূর্ণিঝড় ফণীর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি রুটে স্পিডবোট ও ট্রলারগুলো রমরমা বাণিজ্যে মেতে উঠেছে। রাতে স্পিডবোট চলতে গিয়ে ট্রলারের সঙ্গে সংঘর্ষে ডুবে যায়। এতে স্পিডবোটের এক যাত্রী নিহত ও এক শিশু নিখোঁজসহ অন্তত ১০ যাত্রী আহত হয়েছেন।
এদিকে দুর্ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে ঘূর্ণিঝড়ে ও রাতে চলাচলের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করায় ৯ জন স্পিডবোট চালককে আটক করেছে পুলিশ।
নিখোঁজ শিশুটিকে খুঁজতে ঢাকা থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল পদ্মা নদীতে কাজ শুরু করলেও বৈরী আবহাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে। নিষেধাজ্ঞার মাঝে সারাদিন ও রাতে স্পিডবোট ও ট্রলার চললেও শিমুলিয়ায় বিআইডব্লিউটিএ ও নৌপুলিশের তেমন কোনো ভূমিকা চোখে পড়েনি। তবে শিবচর উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। স্পিডবোট, ট্রলার ও ফেরিতে নেয়া হয় বাড়তি ভাড়া।
সরেজমিন বিআইডব্লিউটিএ ও বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি রুটে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে বিআইডব্লিউটিএ। লঞ্চ চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকলেও শিমুলিয়া থেকে গভীর রাত পর্যন্ত স্পিডবোট ও ট্রলার চলাচল করতে দেখা যায়। শুক্রবারও এ ধারা অব্যাহত ছিল। কাঁঠালবাড়ি ঘাট থেকে স্পিডবোট চলাচল বন্ধ থাকলেও শিমুলিয়া ঘাট থেকে অহরহ চলে স্পিডবোট ও ট্রলার।
এ সময় বাড়তি ভাড়া নেয়া হয়। শুক্রবার দুপুরে কাঁঠালবাড়ি ঘাটে প্রশাসন অভিযান চালালে শিমুলিয়া থেকে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসে নৈরাজ্য। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে সব ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে যাত্রী চাপ আরও বেড়ে যাওয়ার সুযোগ নেয় স্পিডবোট চালকরা। রাতের গভীরতার মাঝেই চলছিল স্পিডবোট। রাত সাড়ে ৮টার দিকে শিমুলিয়া ঘাট থেকে ২০ জন যাত্রী নিয়ে আল আমিন নামে এক চালক কাঁঠালবাড়ি ঘাটে রওনা করে। স্পিডবোটটি কাঁঠালবাড়ি ৪নং ফেরিঘাট এলাকায় এলে বিপরীতমুখী ট্রলারের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে স্পিডবোটটি ডুবে ১০ যাত্রী আহত হন।
আহতদের মধ্যে ৩ জনকে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে মুরাদ (২৫) নামের এক যাত্রী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। আমির হামজা (৬) নামের এক শিশু নিখোঁজ রয়েছে। নিখোঁজ আমিরের মা, বাবা ও ভাই ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। নিহত মুরাদ ঢাকার বাড্ডার খিলবাড়িরটেক এলাকার ইসমাইল হোসেনের ছেলে। তার শ্বশুরবাড়ি শিবচরের নিলখী। শুক্রবার ঢাকার ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল বারবার উদ্ধার তৎপরতা চালানোর চেষ্টা করলেও বৈরী আবহাওয়ায় ব্যাহত হয়। কাঁঠালবাড়ি ঘাট থেকে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ থাকায় ফেরিগুলোতে ছিল যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। সুযোগ বুঝে ফেরি ভাড়াও ৫ টাকা বাড়িয়ে নেয়া হয়।
কবির হোসেন নামের এক ট্রলার যাত্রী বলেন, শিমুলিয়া ঘাটে সব অরাজকতা চলছে। আমার কাছ থেকে স্পিডবোটের ভাড়া ২শ’ টাকা নিয়ে ট্রলারে পদ্মা নদী পার করল। বিআইডব্লিউটিএ বা নৌপুলিশের কোনো তৎপরতা নেই। নিহত মুরাদের বাবা ইসমাইল হোসেন মণ্ডল জানান, শিমুলিয়া ঘাটে নৌপুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএ থাকলেও তাদের কোনো তৎপরতা নেই। তাদের গাফিলতির কারণে আমার ছেলেকে জীবন দিতে হল।
নিখোঁজ আমির হামজার মামা কামরুল হোসেন বলেন, আমার বোন স্বামীসহ দুই ভাগিনা নিয়ে আমাদের বাড়ি আসছিল। স্পিডবোট ডুবিতে বোনজামাই ও বড় ভাগিনা গুরুতর আহত হয় ও ছোট ভাগিনা নিখোঁজ রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস বারবার চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যাচ্ছে না।
বিআইডব্লিউটিসির কাঁঠালবাড়ি ঘাট ম্যানেজার আ. সালাম বলেন, সীমিত আকারে ফেরি চলছে। ফেরিগুলোতে যাত্রীদের প্রাধান্যই বেশি। শিবচর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ম্যানেজার মর্তুজা ফকির বলেন, নিখোঁজ শিশুটিকে উদ্ধারে ঢাকার ডুবুরি দল চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
Add Comment