সমালোচিত সেই বিজ্ঞাপন নিয়ে যা বললেন নুহাশ হুমায়ূন

Post Iamge

Advertise

সম্প্রতি একটি মোবাইল ফোনের বিজ্ঞাপন নির্মাণ করে বেশ সমালোচিত হচ্ছেন নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদপুত্র নুহাশ।

‘রানিং রাফি’ নামে সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত হয় ওই বিজ্ঞাপনটি।

বিজ্ঞাপনটির ঘটনাপ্রবাহ পাহাড়ি এলাকার পাহাড়ি ও বাঙালি সম্পর্কের বাস্তব চিত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।

বিজ্ঞাপনটি অনলাইনে প্রকাশের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নুহাশকে নিয়ে তুমুল সমালোচনা ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়।

একের পর এক তীর্যক মন্তব্য জমা পড়ে এই তরুণ নির্মাতাকে ঘিরে।

এসব সমালোচনা ও বিতর্কের মাঝেই বিজ্ঞাপনটির জন্য ক্ষমা চেয়েছেন নুহাশ হুমায়ূন।

তিনি বলেছেন, ‘আমি আপনাদের জানাতে চাই- আমি আপনাদের কথা শুনছি, শিখছি আর পরিণত হচ্ছি ।’

গতকাল বুধবার বিকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেয়া একটি পোস্টে এমন বিজ্ঞাপন নির্মাণের জন্য ক্ষমা চান নুহাশ।

পাঠকের জন্য নুহাশের সেই স্ট্যাটাস তুলে ধরা হলো-

‘আমার নির্মিত নতুন একটি বিজ্ঞাপন নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। আমি এর সঙ্গে কিছু যোগ করতে চাই।

এই বিজ্ঞাপনটি আমি নির্মাণ করেছি; কিন্তু এটার মূল ভাবনা আমার ছিল না। থার্ড পার্টি যখন কনসেপ্টটা দেয়, আমার কাছে ভালো লাগে। কনসেপ্টটা হলো পরিবার নিয়ে। একটা প্রত্যন্ত গ্রাম। যেখানে মুসলিমরা হলো সংখ্যালঘু।

এটা রমজান মাসের ওপর ফোকাস করা একটা বিজ্ঞাপন। কিন্তু এর মূল ভাবনা শুধু রমজানের রোজা রাখায় সীমাবদ্ধ না। এটা একাত্মতা আর বন্ধনেরও গল্প।

আমার কাজটি যেন বাস্তবসম্মত হয়, তাই আমি আমার টিমে এথনিক কমিউনিটি থেকে প্রতিনিধি রেখেছিলাম।

কিন্তু যেহেতু বিজ্ঞাপনের প্রথমে লেখা দেখায়-‘A Nuhash Humayun Film’, তাই পরিচালক হিসেবে এর সব দায়িত্ব আমারই।

এই বিজ্ঞাপনটা আমিই নির্মাণ করেছি, গল্পটাও আমার পছন্দ হয়েছে। এর স্ক্রিপ্ট আমি পরিমার্জন করেছি, যেই সোর্স থেকে তথ্য পেয়েছি– তাও বিশ্বাস করেই ব্যবহার করেছি।

এই বিজ্ঞাপনের সব দায়দায়িত্ব মাথায় নিয়েই, আমি গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি তাদের কাছে। যারা বিজ্ঞাপনটি দেখে কোনোভাবে কষ্ট পেয়েছেন অথবা যাদের কাছে মনে হয়েছে আমি চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে ভুলভাবে উপস্থাপন করেছি। আমি বিনীতভাবে জানাতে চাই, কাউকে কষ্ট দেয়া বা আঘাত করা কখনই আমার উদ্দেশ্য ছিল না।

চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আর সমস্যা মিডিয়াতে তেমনভাবে সামনে আসে না।

আমরা সেসব গুরুত্বপূর্ণ জিনিসকে বাদ দিয়ে বিজ্ঞাপনটা নির্মাণ করেছি খুব সরলীকরণ করে, দেখে ভালো লাগবে এমন একটা গল্প নিয়ে।

যেখানে অবশ্যই আগে চট্টগ্রামের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সেইসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সামনে আসা প্রয়োজন ছিল।

অনেক মানুষ আমাকে তাদের মতামত জানাচ্ছেন। কিছু ভাল, কিছু খারাপ আর কিছু বেশ কঠিন। অবশ্যই এইসব মতামত আমাকে নির্মাণের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে আরো অনেক দায়িত্ববান ও যত্নশীল করে তুলবে।

আমি এটাও দেখলাম অনেকেই এখানে টেনে আনছেন আমার পরিবারকে, ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করছেন আমাকে।

যেই ছেলেটি বিজ্ঞাপনের প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করেছেন- তাকেও নোংরাভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে। এসব ঘৃণা প্রকাশ মূল বিষয়ের সঙ্গে সংগতিহীন।

এই বিজ্ঞাপনের গল্পটি আমার ভালো লেগেছিল। কারণ এটার মূল ভাবনা ছিল একাত্মতা প্রকাশ। আমার ভাবতে খুব খারাপ লাগছে, এই বিজ্ঞাপনটা কোনোভাবে বিভেদ তৈরি করছে! কোনোভাবেই সেটা আমার উদ্দেশ্য ছিল না।

যারা এই বিজ্ঞাপনটি নিয়ে লিখছেন, কথা বলছেন, আর ভালোমন্দ যাই ভাবছেন- আমি আপনাদের জানাতে চাই- আমি আপনাদের কথা শুনছি, শিখছি আর পরিণত হচ্ছি।’

প্রসঙ্গত নুহাশ হুমায়ূনের তুমুল সমালোচিত ও বিতর্কিত সেই বিজ্ঞাপনচিত্রতে দেখানো হয় এমন এক পাহাড়ি অঞ্চল যেখানে আজান শোনা যায় না, যেখানে মুসলমানরা সংখ্যালঘু।

রমজান মাসে সেহরি ও ইফতারের সময় সেই পাহাড়ে বসবাসরত বাঙালি মুসলমানদের আজানের সময় জানিয়ে দেয় এক পাহাড়ি কিশোর রাফি।

যাকে দৌড়ে গিয়ে বাঙালি মুসলমানদের ইফতার ও সেহরির সময় জানিয়ে দিতে দেখা যায়।

বিজ্ঞাপনটি প্রকাশের পর ক্ষুদ্র নৃতাত্বিক গোষ্ঠীর অনেকেই এর ঘটনাপ্রবাহ পাহাড়ি এলাকার পাহাড়ি-বাঙালি সম্পর্কের বাস্তব চিত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করেছেন।

বিজ্ঞাপনে দেখানো পাহাড়ের মানুষের জীবনধারার কিছু অসঙ্গতি রয়েছে বলে দাবি অনেকের।

এমন বিজ্ঞাপন নির্মাণ করায় সমালোচিত হন এর নির্মাতা নুহাশ হুমায়ূন।

সম্পর্কিত পোস্ট

Add Comment

অন্যান্য সংবাদ

নিউজলেটার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন

আপনার ইনবক্সে সেরা খবর পেতে সাবস্ক্রাইব করুন । আমরা আপনাকে স্প্যাম করব না এবং আমরা আপনার গোপনীয়তাকে সম্মান করি।