সদরঘাটের ফুটপাত দখলমুক্ত করার দাবি

নগরীর ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালমুখী হাজার হাজার যাত্রীর চলাচলের ফুটপাত দীর্ঘদিন ধরে দোকান বসিয়ে দখল করে রাখা হয়েছে। লঞ্চঘাটগামী যাত্রী ও এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন, নগরীর অন্যান্য ফুটপাত দখলমুক্ত হলেও দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র এ ফুটপাত ঘিরে দোকানের জায়গা মৌখিক ক্রয়-বিক্রয় ও ভাড়া প্রদান করছে।
এছাড়া চোরাই বৈদ্যুতিক লাইন দিয়ে দোকানিদের কাছ থেকে বিল আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে বাসস্ট্যান্ড বানিয়ে রাখা হয়েছে। বিভিন্ন গন্তব্যের গাড়ি ব্যস্ত রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে যাত্রী তুলছে। বাসের সামনে দাঁড়ানো উপস্থিত ট্রাফিক সার্জন রিকশা সিরিয়াল করে দিচ্ছেন। আর একটু সামনে এগোতেই বাংলাবাজার রাস্তার মুখে বিশাল লেগুনাস্ট্যান্ড। যেখানে কয়েকশ’ গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। যেখানে অসহনীয় যানজট লেগেই থাকে। প্রায় ৫০০ মিটার পথ হেঁটে যেতে এক ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যাচ্ছে। ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়ায় পথচারীরা রাস্তার ওপর রিকশার বাঁকে বাঁকে হাঁটতে গিয়ে প্রায়ই দুর্র্ঘটনার শিকার হচ্ছে।
মাথায় ভারি বোঝা করে নিয়ে আসা বরিশালগামী লঞ্চযাত্রী আমিনুুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বাসস্ট্যান্ড থেকে লঞ্চঘাট পর্যন্ত যেতে প্রায় আধা ঘণ্টা লেগে যায়। রাস্তায় দোকান ও স্ট্যান্ড থাকার কারণে সময় লেগে যাচ্ছে। ফুটপাত সাধারণ মানুষের জন্য কবে উম্মুক্ত করে দেয়া হবে- এমন প্রশ্ন রাখেন যাত্রীরা। ফুটপাত দখলের কারণে যাত্রীদের অসহনীয় কষ্ট হচ্ছে বলে জানান আমিনুল। একটু সামনে এগিয় যেতে দেখা যায়, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের সামনে রাস্তাটির অবস্থা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ওয়াইজ ঘাট থেকে লালকুঠি ঘাট পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে হকাররা বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছে। আবার স্থানীয় দোকানদাররাও দোকান ছেড়ে অনেকটা ফুটপাতের ওপর পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছে। ফুটপাতের ওপর হোটেলগুলোর পরাটা বানানোর টেবিল ও চুলা রাখা হয়েছে। ওয়াইজ ঘাট রাস্তার দিকে একটু এগোতেই দেখা যায় রাস্তার দক্ষিণপাশজুড়ে বিভিন্ন পণ্যের দোকান বসানো হয়েছে। এদিকে সদরঘাটে যাত্রীদের জন্য নির্মিত সাইকেল মাঠ পার্কিংটি সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত থাকার কথা থাকলেও পার্কিংটি থেকে রিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়ি থেকে রশিদের মাধ্যমে অর্থ আদায় করছে কয়েকজন ব্যক্তি।
পার্কিংয়ের ফি তোলার বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন যুগান্তরকে বলেন, ঘাটের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের নির্দেশে তিনি প্রতি গাড়ি থেকে রশিদ দিয়ে অর্থ আদায় করছেন। এ বিষয়ে সদরঘাটের সরকারি রাজস্ব আদায়ের দায়িত্বে থাকা শিপু আহমেদের সঙ্গে বারবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এছাড়া সদরঘাটের ফুটপাতের দোকানগুলো চলছে অবৈধ বিদ্যুৎ দিয়ে। একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) মাঠ পর্যায়ের কতিপয় কর্মচারীকে ম্যানেজ করে চোরাই লাইন দিয়ে কয়েকশ’ বাতির লাইন করে দিয়েছে। এসব লাইন থেকে বাতিপ্রতি নির্ধারিত বিল আদায় করছে ওই চক্র। সদরঘাট পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই এনামুল যুগান্তরকে বলেন, আমরা তিন মাস হল ফুটপাত হকারমুক্ত করেছি। আপনারা এসে দেখে যান। তবে প্রতিবেদকের পক্ষ ওই রাস্তাটিতে হকার বসার ছবি থাকার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। অবৈধ বিদ্যুৎ লাইনের বিষয়ে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির পরিচালক হারুনুর রশীদ যুগান্তরকে বলেন, যারা সদরঘাটে চোরাই লাইন ব্যবহার করে রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Add Comment