রেলওয়ে হাসপাতাল, স্বাস্থ্য খাতে অব্যবস্থাপনার অবসান ঘটবে কবে?

নামে হাসপাতাল হলেও বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন নেই দেশের রেলওয়ে হাসপাতাল ও ডিসপেনসারিগুলোয়। বিষয়টি অনভিপ্রেত। জানা গেছে, রেলওয়ের ১৪টি হাসপাতাল ও ১৮টি ডিসপেনসারি-কাম-হাসপাতালের মধ্যে ৮টি ডিসপেনসারি এরই মধ্যে পরিত্যক্ত ঘোষিত হয়েছে।
বাকিগুলো চলছে নামমাত্র ডাক্তার, নার্স ও স্টাফ দিয়ে। দুঃখজনক হল, স্বাস্থ্যসেবার এ করুণ চিত্র কেবল রেলওয়ে হাসপাতাল ও ডিসপেনসারিগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং দেশের অধিকাংশ সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোয় প্রায় একই চিত্র বিরাজ করছে।
সরকার অবকাঠামো নির্মাণসহ সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোয় আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং দক্ষ-প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও নার্সসহ প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিলেও সেখানে বিরাজ করছে নানা ধরনের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা। রাজধানী, বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোর বাইরে উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে আমাদের স্বাস্থ্যসেবার চিত্র আরও করুণ। এর ফলে সাধারণ মানুষ প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, যা মোটেই কাম্য নয়।
দেশে ইদানীং অনেক নামিদামি বেসরকারি হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। বিত্তশালীদের কেউ কেউ উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরেও পাড়ি জমান। তবে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও দরিদ্র মানুষের অসুখে-বিসুখে সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোই ভরসা। রোগমুক্তির আশায় এসব হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভিড় করা সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা কতটা পূরণ হচ্ছে- এ প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
সরকার স্বাস্থ্য খাতকে প্রাধান্য দিয়ে দারিদ্র্য দূরীকরণ, নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা, শিক্ষা, মাতৃস্বাস্থ্যসেবা, শিশুমৃত্যু হ্রাস ও পরিবার পরিকল্পনাসহ অন্যান্য কর্মসূচি পরিচালনা করছে বটে, তবে দেখা যাচ্ছে- সরকারের চিন্তাভাবনার সঠিক প্রতিফলন বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই ঘটছে না। এর একটা বড় কারণ স্বাস্থ্য খাতে কর্মরতদের অপেশাদারমূলক মনোভাব ও আচরণ।
এছাড়াও রয়েছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাব। ফলে সরকারের নানামুখী উদ্যোগ ও আন্তরিকতা সত্ত্বেও স্বাস্থ্যসেবাকে যুগোপযোগী ও কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নীত করা সম্ভব হচ্ছে না।
বলার অপেক্ষা রাখে না, স্বাস্থ্য খাতে বিরাজমান অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা দীর্ঘস্থায়ী হলে দেশের মানুষ, বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠী ক্ষতি, দুর্ভোগ ও ভোগান্তির শিকার হবে এবং আমাদের জাতীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
কাজেই সাধারণ মানুষের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য, নিরাপদ ও ঝঁকিমুক্ত করতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
একইভাবে রোগীদের চাহিদা অনুযায়ী প্রত্যাশিত সেবা প্রদানে সক্ষম প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশের রেলওয়ে হাসপাতাল ও ডিসপেনসারিগুলোকে নতুন আঙ্গিকে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
Add Comment