রেলওয়ের বেদখল জমি দ্রুত উদ্ধারের পদক্ষেপ নিন

দেশজুড়ে রেলওয়ের জমি বেদখল হওয়ার অনন্য নজির সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। উল্লেখ্য, সারা দেশে রেলওয়ের মোট ৬১ হাজার ৬০৫ দশমিক ৮৪৯ একর জায়গা-জমি রয়েছে। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলে ২৪ হাজার ৪০১ দশমিক ৬২ একর এবং পশ্চিমাঞ্চলে ৩৭ হাজার ২০৪ দশমিক ২২৯ একর। এ সম্পত্তির মধ্যে উভয় অঞ্চল মিলে অন্তত ৯ হাজার একর জমি দীর্ঘদিন ধরে বেদখল হয়ে আছে।
জমির পাশাপাশি রেলওয়ের মালিকাধীন প্রায় ৭ হাজার ২শ’ সরকারি কোয়ার্টারও অবৈধ দখলে রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বেহাত হওয়া রেলওয়ের প্রায় ৯ হাজার একর জমিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় প্রভাবশালী মহল গড়ে তুলেছে দোকানপাট, বস্তি, কাঁচাবাজার, বহুতল ভবন ইত্যাদিসহ বিভিন্ন স্থায়ী অবকাঠামো। এমন কী রেলওয়ের জমির ওপর ফ্ল্যাট তৈরি করে তা বিক্রির নজিরও রয়েছে।
রেলওয়ের একশ্রেণীর দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে এবং ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় বেহাত হওয়া জমি উদ্ধার করে প্রয়োজনে লিজ দেয়া যেতে পারে। এতে একদিকে যেমন সরকারের আয় বাড়বে, তেমনি মন্ত্রণালয়ও লাভবান হবে। বৃহত্তর চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, স্থানীয় প্রভাবশালীরা অবৈধভাবে রেলওয়ের মালিকানাধীন পাহাড়ের পাদদেশে কাঁচা ও সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে প্রতিমাসে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
প্রায় প্রতিবছর পাহাড় ধসের ঘটনায় সেখানে মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে থাকে। বিগত কয়েক বছরে পাহাড় ধসের ঘটনায় মারা গেছে অন্তত ১৮০ জন। অথচ রেলপথ মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে নির্বিকার। এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যারা যুক্ত, তারা মূলত একসঙ্গে দুটি অপরাধ করছে। প্রথমত তারা অবৈধভাবে সরকারি সম্পত্তি দখল করছে ও ভাড়া দিচ্ছে। দ্বিতীয়ত এ প্রক্রিয়ায় তারা কিছু মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে, যা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না।
রেলের জায়গা-জমি অবৈধভাবে দখল, বিক্রি বা লিজ দেয়ার ঘটনা বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। রেলওয়ের জমি অবৈধভাবে দখল, বিক্রি ও লীজ দেয়াসহ অন্যান্য অনিয়ম এবং চুরি ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে রেলওয়ের লোকসান ও ক্ষতির পরিমাণ দিন দিন বাড়তেই থাকবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রতিবছর রেলওয়ের লোকসান অন্যূন ৭৫৭ কোটি টাকা। এজন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনার পাশাপাশি রেলওয়ের বেহাত হওয়া জমি উদ্ধারে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।
Add Comment