রাজধানীর সড়কে ফের প্রাণহানি

Post Iamge

Advertise

রাজধানীতে মঙ্গলবার ভোরের ফাঁকা রাস্তায় বাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও প্রাইভেট কারের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলাকালে সংঘটিত দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন দু’জন। এমন ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে দেশের সড়ক-মহাসড়কে।

রাজধানীর সড়কগুলোও এখন হয়ে উঠেছে ‘মৃত্যুকূপ’। এদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটেছে আরও অন্তত ১০ জনের। উদ্বেগের বিষয় হল, কোনোভাবেই সড়কে মৃত্যুর হার কমানো যাচ্ছে না; দিন দিন কেবলই বড় হচ্ছে ‘মৃত্যুর মিছিল’। তাই প্রশ্ন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সংশ্লিষ্টদের এত সুপারিশ-পরামর্শ, সরকারের এত উদ্যোগের ফলাফল তাহলে কী?

অধিকাংশ ক্ষেত্রে চালকের খামখেয়ালিপনা এবং নিয়ম না মেনে গাড়ি চালানোর কারণেই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে; যার বড় প্রমাণ রাজধানীতে মঙ্গলবারের দুর্ঘটনাটি। এ দুর্ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে কয়েকজন চালকের খামখেয়ালিপনা।

এ খামখেয়ালিপনায় মত্ত না হলে হয়তো সেদিন ভোরের বাতাস দু’জন নিরীহ মানুষের করুণ মৃত্যুর সাক্ষী হতো না। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতি বছর সড়কে অন্তত ৫ হাজার দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় মারা যায় কমপক্ষে ৪ হাজার মানুষ, পঙ্গুত্ব বরণ করে এর দ্বিগুণ এবং আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। বলার অপেক্ষা রাখে না, দুর্ঘটনায় প্রকৃত হতাহতের সংখ্যা ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি। দেশে সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ পরিবহন খাতে বিরাজমান বিশৃঙ্খলা।

পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের দাপটে দোষী চালকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যায় না। অবশ্য আইন মানার ক্ষেত্রে পথচারীরাও তেমন সচেতন নন। ঝুঁকি নিয়ে বাসে ওঠানামা ছাড়াও জেব্রা ক্রসিং ও ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার না করে চলন্ত বাসের সামনে হাত উঁচিয়ে দৌড়ে রাস্তা পার হওয়াটা পথচারীদের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কঠোর আইন ও এর প্রয়োগ অবশ্যই প্রয়োজন। তবে একই সঙ্গে মানুষকেও সচেতন করতে হবে। মানুষ সচেতন হলে নিঃসন্দেহে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে ও দুর্ঘটনার হার কমে আসবে।

সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিভিন্ন মহল থেকে নানা ধরনের পরামর্শ ও সুপারিশ করা হলেও তা যে অরণ্যে রোদনে পর্যবসিত হচ্ছে, দেশে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহতের ঘটনাগুলো তারই প্রমাণ। সড়ক-মহাসড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সমাধানের অযোগ্য কোনো বিষয় নয়।

এজন্য দরকার সরকারের সদিচ্ছা ও সমন্বিত পদক্ষেপ। দেশে সড়ক ব্যবস্থাপনায় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার পাশাপাশি অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যুক্ত থাকলেও দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার ঘোষণা কেউ দিয়েছে বলে আমাদের জানা নেই।

থাইল্যান্ড ২০১১ সালে ঘোষণা করেছিল- ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনার হার অর্ধেকে নামিয়ে আনবে এবং ইতিমধ্যে এ কাজে তারা সফল হয়েছে। আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে সরকারের পাশাপাশি পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠন, পথচারী-যাত্রী, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সবার সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

সম্পর্কিত পোস্ট

Add Comment

অন্যান্য সংবাদ

নিউজলেটার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন

আপনার ইনবক্সে সেরা খবর পেতে সাবস্ক্রাইব করুন । আমরা আপনাকে স্প্যাম করব না এবং আমরা আপনার গোপনীয়তাকে সম্মান করি।