মাশরাফির যে কথায় জ্বলে উঠলেন মোসাদ্দেক

Post Iamge

Advertise

সিরিজ চ্যাম্পিয়নের খড়া কাটল টাইগারদের।গতরাতে আয়ারল্যান্ডের মালাহাইড ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ধরা দিল বহু আকাঙ্ক্ষিত সেই ট্রফি।ক্যারিবীয়দের ৫ ইউকেটে হারিয়ে ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ।

বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে বাংলাদেশের এই অবিস্মরণীয় জয়ের ত্রাতা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত।মূলত তার ২৪ বলে ৫২ রানের ঝড়ো ইনিংসের কল্যাণেই জয় পায় বাংলাদেশ।তার আগে জয়ের ভিত গড়ে দিয়ে যান সৌম্য সরকার ও মুশফিকরা।

তবে খেলার একটা পর্যায়ে এই জয় অধরাই থেকে যাচ্ছিল। ২২তম ওভারে তিন ছক্কা ও এক চারে ২৫ রান নিয়ে দলের জয়কে হাতের মুঠোয় এনে দেন মোসাদ্দেক।ম্যাচ শেষে ফ্যাবিয়ান অ্যালেনের ওই ওভারটাকেই টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে উল্লেখ করেছেন মোসাদ্দেক। তিনি বলেন, ‘ওই ওভারটাই ছিল আমাদের ম্যাচ জয়ে টার্নিং পয়েন্ট। ওই ওভারের পর সবাই বুঝে গেছে ম্যাচের ফল কী হতে যাচ্ছে।’

বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ২৪ ওভারে ২১০ রান তাড়া করতে নেমে মুশফিকুর রহিমের পর যখন মোহাম্মদ মিঠুনও আউট হলেন, ড্রেসিং রুমে অনেকের মাথা নুইয়ে এসেছিল হতাশায়। তখন মাশরাফি বিন মুর্তজা উঠে দাঁড়ালেন চকিতে। নতুন ব্যাটসম্যান মোসাদ্দেকের কাছে গিয়ে চাপড়ে দিলেন পিঠ। বললেন দুটি কথা। ম্যাচ শেষে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক মোসাদ্দেকের মনে পড়ছে অধিনায়কের সেই কথা।

মোসাদ্দেক যখন উইকেটে গেলেন, জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৫০ বলে ৬৭ রান। এই সময়ের ক্রিকেটে এমন কঠিন কিছু নয়। তবে উইকেট পড়ে গিয়েছিল ৫টি। আরেকটি উইকেটের পতন ডেকে আনত পারত দলের বিপদ। মাহমুদউল্লাহ ও মোসাদ্দেক, উইকেটে থাকা এই দুজনই ছিলেন স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের শেষ জুটি। এরপর ব্যাটিংয়ের অপেক্ষায় ছিলেন বোলিং অলরাউন্ডাররা।

দলকে জিতিয়ে যখন ফিরছেন, মোসাদ্দেককে আবার পিঠ চাপড়ে দিলেন মাশরাফি। পরে হোটেলে ফেরার টিম বাসে ওঠার আগে সাংবাদিকদের মোসাদ্দেক জানান, অধিনায়কের কাছ থেকে পাওয়া প্রেরণার কথা।

মোসাদ্দেক বলেন, ‘উইকেটে যাওয়ার আগে মাশরাফি ভাই বলছিলেন, সৈকত তুই পারবি। যা ইচ্ছা খেল, শেষ করে আয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘শুধু ওই সময়ই নয়, আগের ম্যাচে বোলিংয়ের সময়, এমনকি এবার ঢাকা লিগের পুরো সময়, মাশরাফি ভাই আমাকে নানাভাবে উৎসাহ দিয়ে গেছেন। দলের বাইরে ছিলাম তখন। উনি বলেছেন যে, কি কি করলে দলে ফিরতে পারি। অধিনায়ক এমন ভরসা করলে আত্মবিশ্বাস সবসময়ই ভালো থাকে।’

মোসাদ্দেক বলেন, ‘ব্যাটিংয়ে যাওয়ার পর আমার একটি ব্যাপারই কাজ করছিল যে ইতিবাচক ক্রিকেট খেলব। এমন একটা পরিস্থিতি ছিল যে খুব সহজ ছিল না। আমি চেষ্টা করেছি বল বুঝে খেলতে। আর কিছু না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যখন ফিল্ডিং করে ফিরেছি, তখন মাশরাফি ভাই থেকে শুরু করে মুশফিক ভাই, তামিম ভাই, রিয়াদ ভাই, সবাই একটা কথা বলছিলেন যে, আমাদের যে ব্যাটিং সামর্থ্য আছে এবং পুরো টুর্নামেন্টে যেমন খেলেছি, আমাদের পক্ষে এই রান তাড়া করা সম্ভব।’

সত্যিই সেটি সম্ভব করার পর খুব বেশি উচ্ছ্বাস দেখা যায়নি মোসাদ্দেকের উদযাপনে। তবে জয়ের একটু আগে যখন ফিফটি স্পর্শ করলেন, সেটির উদযাপন ছিল দেখার মতো।

মোসাদ্দেক আরও ‘প্রথম একটা শিরোপা জিতেছি, এটা অনেক ভালো লাগার বিষয়। সেটাও আবার বিদেশের মাটিতে, ভালো একটা দলের বিপক্ষে। সবচেয়ে বড় কথা, বিশ্বকাপের আগে ভালো একটা প্রস্তুতি হলো। এভাবে খেলতে পারলে বিশ্বকাপে আশা করি ভালো একটা ফল পাব।’

এশিয়া কাপ ও ত্রিদেশীয় সিরিজ মিলিয়ে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে আগের ছয়টি ফাইনালের প্রতিটিতেই হেরেছে টাইগাররা। আগের ছয় ফাইনালের তিনটিতে প্রতিপক্ষ ছিল ভারত, দুটিতে শ্রীলংকা ও একটিতে পাকিস্তান।

উপমহাদেশের বাইরের কোনো দলের বিপক্ষে এটাই বাংলাদেশের প্রথম ফাইনাল। সেখানেই খুলল গেরো। লিগ পর্বে উইন্ডিজকে দু’বার যথাক্রমে আট ও পাঁচ উইকেটে হারানোয় ফাইনালে বাংলাদেশই ছিল পরিষ্কার ফেভারিট। শেষ পর্যন্ত ফেভারিটের মতোই জিতল বাংলাদেশ।

উইন্ডিজ : ১৫২/১

বাংলাদেশ : ২১৩/৫

ফল : বৃষ্টি আইনে পাঁচ উইকেটে জয়ী বাংলাদেশ।

সম্পর্কিত পোস্ট

Add Comment

অন্যান্য সংবাদ