মাশরাফির নীরবতায়ও ‘অনেক কথা’

অনেক অপেক্ষার পর বদলেছে ইতিহাস। বাংলাদেশ পেয়েছে প্রথম ওয়ানডে টুর্নামেন্টে শিরোপা জয়ের স্বাদ। গেল কয়েক বছর ধরেই অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার নেতৃত্বে দারুণ সফল টাইগাররা। কিন্তু সেই সফল অধিনায়কও ছিলেন ট্রফি জয়ে ব্যর্থ। এর আগে ৪ টুর্নামেন্টের ফাইনালে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি কিন্তু শেষে মিলেছে হতাশা। তাই আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে ওঠার পর ছিল ভয় ও শঙ্কা। হবে তো! অবশেষে মিলেছে সেই সোনার হরিণের সন্ধান। সেই সঙ্গে বিশ্বকাপের আগে লড়াইয়ের রশদও পেয়েছেন টাইগার দলপতি। দলকে আয়ারল্যান্ড রেখেই তিনি দেশে ফিরে এসেছেন শনিবার রাতে। বিমান বন্দরে নেমে সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চাননি। তবে তার যতটা বলেছেন আর নীরব থেকেছেন তাতেই লুকিয়ে ছিল না বলা কথা আর অনেক বার্তা। বিশেষ করে বিশ্বকাপ দলের সামর্থ্য নিয়ে যে প্রশ্ন ছিল তা এখন নেই বললেই চলে। দলকে ছাড়া বড় এই অর্জন নিয়ে একা কথা বলতে চান না মাশরাফি। তার এমন কথাতেই স্পষ্ট সতীর্থদের উপর তার কতটা আস্থা।
বিমানবন্দরে ফিরে মাশরাফি শুরুতেই জানিয়ে দিলেন তার দলকে ছাড়া ট্রফি জয় নিয়ে তেমন কিছুই বলার নেই। তিনি বলেন, ‘্থআপনারা কষ্ট করে এসেছেন তাই আপনাদেরকে ধন্যবাদ। আমি আসলে আপনাদের সাথে খেলা নিয়ে কথা বলব না কারণ পুরো দল আসেনি। যারা খেলেছে তারা এখানে থাকার দাবি রাখে। পুরো দল আসেনি, আমি এসেছি, এখানে কথা বলা ঠিক হবে না। মূল খেলোয়াড়রা যারা খেলেছে এবং মাঠে কষ্ট করেছে, তারা এখানে থাকার দাবিদার।’ এমন কথা বলে শুধু দলের প্রতি আস্থাই না, জানিয়েছেন তাদের কতটা গুরুত্ব দেন তিনি। বলার অপেক্ষা রাখে না অধিনায়কের এমন আচরণে সতীর্থরা আরো চাঙ্গা হবেন। বাড়বে মনোবলও।
শনিবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন থেকে ঢাকায় পা রাখেন মাশরাফি। তার দেশে ফিরে আসার বিষয়টি অবশ্য আগেই নিশ্চিত ছিল। তবে এত বড় উপহার নিয়ে ফিরবেন তা হয়তো তিনি নিজেও জানতেন না। চারদিন পরিবারের সঙ্গে কাটিয়ে ইংল্যান্ডে দলের সঙ্গে যোগ দিবেন তিনি। বিমানবন্দরে নামার পর থেকে মাশরাফিকে বেশ আত্মবিশ্বাসীই দেখাচ্ছিল। বিশেষ করে বিশ্বকাপের আগে এমন অর্জন তার জন্য বড় প্রাপ্তি। দলের এমন পারফরম্যান্সে তার চোখে জ্বলজ্বল করছিল আরো ভালো কিছু উপহার দেয়ার আত্মবিশ্বাস। মাশরাফি বলেন, ‘এটা পুরো দলের অর্জন, চার দিনের ছুটি, যে যার মত গিয়েছে। এই টুর্নামেন্ট নিয়ে কথা বলতে গেলে, অন্তত পুরো দল থাকলে আমার জন্য কথা বলাটা ঠিক হত। ওরা না থাকলে, আমার ভালো লাগছে না কথা বলতে। আমার কাছে মনে হয় ওরা থাকলে আমি ভালো অনুভব করতাম।’
ডাবলিন থেকে মাশরাফির সঙ্গে একই ফ্লাইটে উঠেছিলেন সতীর্থ ওপেনার তামিম ইকবালও। তামিম অবশ্য দুবাইতে নেমে গিয়েছেন। সেখানে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাবেন তিনি। সেখান থেকে কার্ডিফে দলের সঙ্গে যোগ দিবেন তামিম। এদিকে অধিনায়কের সঙ্গেই ঢাকায় ফিরে এসেছেন বিশ্বকাপ দলে না থাকা চার ক্রিকেটার- তাসকিন আহমেদ, ইয়াসির আলি রাব্বি, ফরহাদ রেজা এবং নাঈম হাসান। দলের সঙ্গে থাকলেও আয়ারল্যান্ড সিরিজে তাদের খেলা হয়নি। আর বিশ্বকাপ দলেও তারা নেই। তবে প্রস্তত থাকতে হবে দলের যে কোন প্রয়োজনে উড়ে যেতে হতে পারে তাদের মধ্যে কোনো এক বা দু’জনকে।
ইংল্যান্ডে থেকে যাওয়া দলের বাকিরা অনুশীলন শুরু করবেন সেখানে। ২৬শে মে ভারতের বিপক্ষে প্রথম প্রস্তুতি ম্যাচ দিয়ে টাইগাররা শুরু করবে বিশ্বকাপ মিশন। ত্রিদেশীয় সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ফাইনালসহ টানা তিন ম্যাচে হারিয়ে শিরোপা জিতে নেয়া বাংলাদেশকে ক্রিকেট বোদ্ধারা এরই মধ্যে দেখতে শুরু করেছেন সেমিফাইনালে। তাই এ জয় শুধু অনুপ্রেরণাই নয় হতে পারে বিশ্বকাপের চাপও।
Add Comment