ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে দূর করতে হবে কাস্টম হাউসে দুর্নীতি

রাজস্ব আয়ের প্রধানতম কেন্দ্র চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। দেশের আমদানি-রফতানির সিংহভাগ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে সম্পাদন হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই এ বন্দরকেন্দ্রিক কাস্টম হাউসে দেশের ব্যবসায়ীদের কাজকর্ম বেশি থাকে। এ কারণে গড়ে প্রতিবছর ৩০ থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস থেকে।
সরকার চলতি অর্থবছরে এ হার বাড়িয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, এ কাস্টম হাউসটি ঘিরে গড়ে উঠেছে নানা ধরনের সিন্ডিকেট, যারা ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে নানাভাবে অর্থ আদায় করছে। শুধু তা-ই নয়, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ঘুষের লেনদেন ও সংশ্লিষ্ট অনিয়ম ওপেন সিক্রেট হয়ে পড়েছে।
এ অবস্থায় ব্যবসায়ীদের হয়রানি ও ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়মের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য সরকারের শীর্ষ মহলের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তারা। আমরা মনে করি, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য তথা আমদানি-রফতানি নির্বিঘ্ন ও দ্রুত করার জন্য কাস্টম হাউসের অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার বিকল্প নেই।
জানা যায়, আমদানি পণ্য খালাসের ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ব্যবসায়ীরা এমন অসহায় হয়ে পড়েছেন যে, নানা কৌশলে তাদের ঠেকিয়ে অর্থ আদায় করা হয়। পরিস্থিতি কত ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, তা অনুমান করা যায়- পণ্যের চালান খালাস করার জন্য কোন এসিকে কত (অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার) ও কোন ডিসিকে (ডেপুটি কমিশনার) কত টাকা ঘুষ দিতে হয় তা-ও সবার মুখে মুখে।
এমনকি কোন কর্মকর্তা ‘ঘুষখোর’ এবং কোন কর্মকর্তা কীভাবে ব্যবসায়ী বা তার প্রতিনিধিকে ফাঁদে ফেলেন তা-ও সবার জানা। পরিস্থিতি যখন এমন, তখন অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ভয়াবহ তথ্য, অসাধু অনেক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে ঘুষ দিয়ে নিজেদের পণ্য খালাস করে নিলেও সৎ ব্যবসায়ীদের হয়রানির মুখে পড়তে হয় প্রতিনিয়ত।
অনিচ্ছাকৃত ভুল বা এড়িয়ে যাওয়া যায় এমন স্বাভাবিক ভুল ধরে বড় ধরনের অর্থ আদায় করার রেওয়াজ যেমন রয়েছে, তেমনি ঘুষ দিলে কোনো ধরনের প্রশ্ন ছাড়াই ভুল কাগজপত্র থাকলেও পণ্যের চালান ছেড়ে দেয়া হচ্ছে দেদার। এতে সৎ ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারা যে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন, তাতে সন্দেহ নেই। কাস্টম কর্তৃপক্ষ ও তাদের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রকদের উচিত এসব বিষয় খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া।
উদ্বেগের বিষয়, ব্যবসায়ীরা এসব অনিয়ম-দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে এলেও কোনো লাভ হচ্ছে না। চালানভেদে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও রাজস্ব কর্মকর্তার জন্য ১ হাজার টাকা, আনঅফিসিয়াল কর্মচারীর জন্য ২০০ টাকা, শুল্ক জমা দেয়ার জন্য ২০০ থেকে ৫০০ টাকা এবং ডকুমেন্ট আউট পাস বা ক্লিয়ারেন্সের জন্য ৫০০ টাকা ঘুষ দিতে হয়।
এভাবে একটি চালান খালাসের ক্ষেত্রে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয় কাস্টম হাউসে। আর ঘুষ দিতে অস্বীকার করলে ক্লিয়ারেন্স না দিয়ে পণ্য আটকে রাখা হয় দিনের পর দিন। বর্তমানে আমাদের অর্থনীতি উন্নতির দিকে যাচ্ছে।
পর্যায়ক্রমে উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন আমরা দেখছি; কিন্তু সরকারের রাজস্ব জোগাড় করে দেয়ার সিংহভাগ দায়িত্ব যে ব্যবসায়ীদের হাতে, তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করে যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়, তা বলাই বাহুল্য। এজন্য কাস্টম হাউসের অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি অটোমেশন করে পণ্য খালাস দ্রুততার সঙ্গে করার ব্যবস্থা করতে হবে।
Add Comment