বাক্সবন্দি ক্যান্সার নির্ণয় মেশিন

Post Iamge

Advertise

২০ কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা ক্যান্সার নির্ণয়ের লিনিয়র এক্সিলেটর মেশিন বাক্সবন্দি হয়ে পড়ে থাকার বিষয়টি অনভিপ্রেত। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ক্যান্সার নির্ণয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য কেনা হয়েছিল মেশিনটি। তবে তা স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ‘বাঙ্কার’ না থাকায় গত ৭ বছর ধরে এটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থেকে বর্তমানে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

ঘটনাটি ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেয়ার মতো। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন না করেই অপরিকল্পিতভাবে মেশিন কেনার কারণে একদিকে সরকারি অর্থের অপচয় হয়েছে, অন্যদিকে রোগ নির্ণায়ক মেশিনটির কোনো সুফল পাচ্ছেন না এ অঞ্চলের রোগীরা। এ ক্ষেত্রে যা ঘটেছে, তাকে কি অজ্ঞতা বলা যাবে? অবশ্যই না; বরং আমরা মনে করি এটি রীতিমতো অনিয়ম হিসেবে গণ্য হওয়া উচিত।

স্বাস্থ্য খাতে এ ধরনের ঘটনার খবর প্রায়ই গণমাধ্যমে আসে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিশ্বব্যাংকের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশ মেডিকেল ইকুইপমেন্ট সার্ভে’ শীর্ষক জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছিল, সরকারি হাসপাতালগুলোয় অন্তত ১৬ শতাংশ যন্ত্রপাতি বাক্সবন্দি হয়ে পড়ে থাকে; বিকল থাকে কমপক্ষে ১৭ শতাংশ। অন্যদিকে ১৭ শতাংশ যন্ত্রপাতি সচল থাকলেও সেগুলো ব্যবহৃত হয় না। অর্থাৎ সব মিলিয়ে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সরবরাহকৃত ৫০ শতাংশ যন্ত্রপাতি রোগীদের কোনো উপকারে আসে না। জরিপের ফলাফল থেকে এটি স্পষ্ট যে, প্রতি অর্থবছরে কোটি কোটি টাকা মূল্যের যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনা হলেও তা থেকে সাধারণ মানুষ খুব একটা সুফল পাচ্ছেন না।

বস্তুত এর পেছনে রয়েছে দুর্নীতি। যত বেশি যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসা সরঞ্জাম ক্রয়; তত বেশি কমিশন বাণিজ্য ও লুটপাটের সুযোগ। আর এ কারণেই স্বাস্থ্য খাতে এ ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি ঘটছে। এ খাতে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে কেনা যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অধিকাংশই বিকল বা অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে থাকার বিষয়টি বর্তমানে ‘নিয়মে’ পরিণত হয়েছে, যার অবসান হওয়া জরুরি।

অভিযোগ রয়েছে, সরকারি হাসপাতালে যন্ত্রপাতি ক্রয়ের নামে এক দফা অর্থ লুটপাটের পর মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের নামে আরেক দফা লুটপাট চালানো হয়। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, রাজনীতিক, একশ্রেণীর চিকিৎসকসহ নানা শ্রেণী ও পেশার মানুষ। ফলে দুর্নীতিবাজরা সরকারি কোষাগারের কোটি কোটি টাকা লোপাট করলেও তা দেখার কেউ নেই। এতে লুটপাটের কাজটি যে বাধাহীনভাবে চলে, তা বলাই বাহুল্য।

নির্ভুলভাবে রোগ নির্ণয় এবং সে অনুসারে সঠিক চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতির বিকল্প নেই। অথচ দেশের অধিকাংশ সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোয় এসবের ঘাটতি রয়েছে। যেগুলো আছে, তার অধিকাংশই হয় অপ্রয়োজনীয় নয়তো বিকল হয়ে পড়ে আছে।

এ সুযোগে দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। রোগীরা সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোয় কাক্সিক্ষত সেবা না পেয়ে গাঁটের পয়সা খরচ করে এদের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হচ্ছে। সরকারের উচিত এদিকে দৃষ্টি দেয়া। স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি ও অপচয় রোধে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে, এটাই কাম্য।

সম্পর্কিত পোস্ট

Add Comment

অন্যান্য সংবাদ

নিউজলেটার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন

আপনার ইনবক্সে সেরা খবর পেতে সাবস্ক্রাইব করুন । আমরা আপনাকে স্প্যাম করব না এবং আমরা আপনার গোপনীয়তাকে সম্মান করি।