বক্ষব্যাধি হাসপাতালে সিটিস্ক্যান মেশিন নষ্ট এক বছর

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত জাতীয় বক্ষব্যাধি ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের একমাত্র সিটিস্ক্যান মেশিনটি।
চারটি এক্সরে মেশিনের মধ্যে তিনটি বিকল কয়েক বছর ধরে। অথচ বক্ষব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীদের রোগ নির্ণয়ে এ দুটি মেশিন অপরিহার্য।
মেশিন নষ্ট থাকায় প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক রোগীকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে, অথচ মেশিন ঠিক করতে কার্যকর উদ্যোগ না নিয়ে চিঠি পাঠিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
রোগীদের এ দুর্ভোগকে সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাচ্ছেন হাসপাতালের এক শ্রেণীর অসাধু চিকিৎসক-কর্মচারী। হাসপাতালসংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, অসাধু চিকিৎসক-কর্মচারীরা রোগীদের বেসরকারি ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিকে পাঠিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৮ সালের এপ্রিলে বিকল হয়ে পড়ে হাসপাতালের একমাত্র সিটিস্ক্যান মেশিনটি। এরপর এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও ঠিক করা হয়নি মেশিনটি। এ নিয়ে হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি দেয়া হলেও এটি ঠিক করার কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
অন্যদিকে হাসপাতালে রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ৪টি এক্সরে মেশিন রয়েছে, যার মধ্যে তিনটিই নষ্ট। সংশ্লিষ্টরা জানান, একটি এক্সরে মেশিন নষ্ট হয় ২০১৩ সালে। অন্য দুটি নষ্ট হয় ৩-৪ বছর আগে। যে মেশিনটি কার্যকর রয়েছে সেটি দিয়ে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা কাজ চালানো হয়। প্রতিদিন গড়ে ২০০-২৫০টি এক্সরে করা হয়। তবে এই মেশিনটির অবস্থাও তেমন ভালো নয়। প্রায়ই হ্যাং হয়ে যায়। কিন্তু এদিকে খেয়াল নেই কর্তৃপক্ষের। সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে একাধিকবার চিঠি দিলেও এক্সরে মেশিনগুলো ঠিক করতে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
রোববার সরেজমিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের বহির্বিভাগে সেবা নিতে আসা বেশিরভাগ রোগীকে বাইরে থেকে এক্সরে করিয়ে আনতে বলা হচ্ছে। হাসপাতালের কিছু কর্মচারী ও কিছু বহিরাগত দালাল রোগীদের লাইফ কেয়ার, রিলায়েন্স ইত্যাদি ক্লিনিকে পাঠিয়ে দিচ্ছে। রোগীর আর্থিক অবস্থা ও পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা বুঝে পাঠানো হয় মহাখালী রেল গেটসংলগ্ন ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মহাখালী বাস টার্মিনালসংলগ্ন মেট্রোপলিটন হাসপাতাল, বাড্ডার ইবনে সিনা ও প্রেসক্রিপশন পয়েন্ট ডায়াগনস্টিকেও। সিটিস্ক্যানের রোগী হলে এসব প্রতিষ্ঠান নিজস্ব গাড়িতে করে তাদের নিয়ে যায়।
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক যুগান্তরকে জানান, বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিকের কমিশন বাণিজ্যের কারণেই মেশিনগুলো ঠিক হয় না। তারা জানান, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল ৬৭০ শয্যার একটি বড় ও বিশেষায়িত হাসপাতাল। এখানে প্রতিদিন কয়েকশ’ রোগীকে এক্সরে ও সিটিস্ক্যান কারানোর প্রয়োজন হয়। মেশিন নষ্ট থাকায় এদের সবাইকে এসব পরীক্ষা বাইরে থেকে করিয়ে আনতে বলা হয়। এতে রোগীরা যেমন ভোগান্তিতে পড়েন, তেমনি আর্থিক ক্ষতিরও শিকার হন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বক্ষব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীদের জটিল ও কঠিন রোগ নির্ণয়ে এক্সরে ও সিটিস্ক্যান করা অপরিহার্য। সরকারি হাসপাতালে বুকের, মাথার, হাতে-পায়ের এক্সরে করাতে দিতে হয় ২০০-৩০০ টাকা। অন্যদিকে প্রাইভেট হাসপাতালে এসব এক্সরে করতে রোগীদের গুনতে হয় ৪০০-১২০০ টাকা। বক্ষব্যাধি হাসপাতালে পেটের সিটিস্ক্যান করতে একজন রোগীর ব্যয় হয় ৪ হাজার টাকা। একই পরীক্ষা প্রাইভেট ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিকে করাতে একজন রোগীর ব্যয় হয় ১২-১৪ হাজার টাকা। একইভাবে সরকারি হাসপাতালে মাথা, বুক ও গলার সিটিস্ক্যান করাতে লাগে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। অন্যদিকে প্রাইভেট হাসপাতালে এ জন্য ব্যয় করতে হয় ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় বক্ষব্যাধি ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এএসএম জাকির হোসেন যুগান্তরকে বলেন, সরকারি নিয়মানুযায়ী যেসব জায়গায় চিঠি দেয়া প্রয়োজন সেখানে চিঠি দেয়া হয়েছে। তাছাড়া একটি সিটিস্ক্যান মেশিন কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। স্বল্প সময়ে টেন্ডার হতে পারে। একটি এক্সরে মেশিন কেনার কথাও চলছে।
সামগ্রিক বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর (হসপিটাল সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট) ডা. সত্যকাম চক্রবর্তী যুগান্তরকে বলেন, বিষয়গুলো আমার জানা নেই। তবে মেশিনের প্রয়োজন থাকলে সেখান থেকে চাহিদাপত্র পাঠাতে হবে। চাহিদাপত্রের ভিত্তিতে মেশিন বরাদ্দ দেয়া হবে।
রোগীদের বেসরকারি ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিকে পাঠানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাসপাতালের সামনে দালালের দৌরাত্ম্য ও বেসরকারি ক্লিনিকের গাড়িতে রোগীদের নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Add Comment