ফের চলন্ত বাসে ধর্ষণ-হত্যা: অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই সমাধান

ফের চলন্ত বাসে ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়েছেন এক নারী। এবারের ঘটনায় কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে বাস চালক-হেলপার ও তাদের দোসরদের লালসার শিকার হয়েছেন এমন একজন নারী, যিনি মানবসেবাকে পেশা হিসেছে বেছে নিয়েছিলেন; ছিলেন রাজধানীর বেসরকারি একটি বড় হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজের নার্স।
এর আগে গত বছর ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পথে টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে চালক-হেলপারদের লালসার শিকার হয়ে প্রাণ হারাতে হয়েছিল রূপা নামের আইনের এক ছাত্রীকে। কেবল গণপরিবহনেই নয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে পারিবারিক গণ্ডি- কোথাও নিরাপদ নন নারী।
সম্প্রতি ফেনীতে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলা তুলে না নেয়ায় পুড়িয়ে হত্যা করা হয় নুসরাত জাহান রাফি নামের এক উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে। এসব ঘটনা থেকে যে বিষয়টি স্পষ্ট তা হল- নিজের শিক্ষক থেকে নিয়ে চলন্ত গাড়ির গণপরিবহন কর্মী, কারও কাছেই নিরাপদ নন নারীরা।
এ অবস্থায় শিক্ষাঙ্গনে নিপীড়নবিরোধী নীতিমালার আলোকে প্রতিটি স্থানে নারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করার ওপর বিশেষ জোর দেয়া দরকার
জানা যায়, শাহিনুর আক্তার তানিয়া নামের ওই নার্স বাবার সঙ্গে প্রথম রোজা রাখার উদ্দেশ্যে সোমবার রাতে রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকা থেকে কটিয়াদীগামী স্বর্ণলতা পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন। বাসে কয়েকবার বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে তার কথা হয়।
রাত ১০টার মধ্যে তার পৌঁছার কথা গন্তব্যস্থলে; কিন্তু নিজের স্টেশনের আগের স্টেশনে সব যাত্রী নেমে যাওয়ায় চালক-হেলপার চালাকি করে সেখান থেকে যাত্রী বেশে কয়েকজনকে তুলে নিয়ে কটিয়াদীর দিকে না গিয়ে পাশের উপজেলা বাজিতপুরের পিরিজপুরের দিকে চলে যায়।
ধারণা করা হচ্ছে, যাত্রীবেশী সহযোগীদের নিয়ে ওই সময়ই তানিয়াকে গণধর্ষণ ও গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করা হয়।]
পরে দুর্ঘটনার কথা বলে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে লাশ রেখে পালিয়ে যায় ঘাতক-ধর্ষকরা। পবিত্র রমজানের প্রথম রাতে গত বছর মা হারানো তানিয়ার এমন নির্মম গণধর্ষণ-হত্যাকাণ্ডের ঘটনা গা শিউরে ওঠার মতো।
খুনি-ধর্ষকদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করার মাধ্যমেই কেবল এর কিছুটা প্রতিকার হতে পারে। অন্যথায় তানিয়ার বাবার স্ত্রী হারানোর পর মেয়েকে এবং তার ভাইদের বোন হারানোর বেদনা কোনোভাবেই লাঘব হওয়ার নয়।
চলন্ত গাড়িতে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনসহ গণপরিবহনে যাত্রীকে পিটিয়ে হত্যা, গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হত্যা, ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য ও যাত্রীদের জিম্মি করাসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যা পরিবহন শ্রমিকরা করছে না।
কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির নজির নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় গণপরিবহনে নারী নির্যাতন-ধর্ষণের মতো অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
বর্তমান সময়ে নারীর সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবদান ছাড়া কোনো জাতির এগিয়ে যাওয়া অসম্ভব। আমাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিসহ নানা সূচকে ভালো অবস্থানে থাকার পেছনে নারীর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই।
নরপিশাচদের লালসার শিকার তানিয়ার কথাই ধরা হোক না কেন, নিজের ও পরিবারের সমৃদ্ধির পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি খাতে অবদান রাখছিলেন তিনি। কিন্তু তার সেবা গ্রহণের সুযোগ অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দেয়া হল।
আর কোনো তানিয়া, রাফি ও রূপার ভাগ্যে যেন এমন পরিণতি না ঘটে, তারা যেন দেশের সেবায় নির্বিঘ্নে ভূমিকা রাখতে পারেন, তা নিশ্চিত করার জন্য নারী নির্যাতন-নিপীড়নবিরোধী কঠোর আইন ও হত্যাকারী-ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে অবিলম্বে।
Add Comment