ফণীর প্রভাব

Post Iamge

Advertise

৪৩ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ফণী শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের ওপর দিয়ে হালকাভাবেই বয়ে গেছে। যেভাবে আশঙ্কা করা হয়েছিল এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল, শেষ পর্যন্ত তেমন প্রলয়ংকরী রূপ নেয়নি ফণী, এটি স্বস্তিদায়ক। ঘূর্ণিঝড়টি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে আগাম ব্যবস্থা, সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য। এর আগের কয়েকটি ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, আগাম ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার কারণে ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব হয়েছে।

ফণীর ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, উপকূলীয় অঞ্চলে, বিশেষত খুলনা জেলার কয়রা, দাকোপ ও অন্যান্য উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে বিপুলসংখ্যক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। সরকারের প্রচারণা, ইতিবাচক ও আগাম সতর্কতামূলক বিভিন্ন পদক্ষেপে মানুষ সতর্ক হয়ে উঠছেন, এটি তারই প্রমাণ। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রেই আগাম ও পর্যাপ্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার বিকল্প নেই। কারণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঠেকানো ও বন্ধ করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে ক্ষয়ক্ষতি যাতে কমিয়ে আনা যায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

ঘূর্ণিঝড় ফণীর ক্ষেত্রে আগাম প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা এবং সাম্প্রতিককালের আরও কিছু ঘূর্ণিঝড়ে সতর্কতামূলক পদক্ষেপের কারণে ক্ষয়ক্ষতি কম হওয়া থেকে যে বিষয়টি স্পষ্ট তা হল, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। একটা সময় ঘূর্ণিঝড় বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানেই ছিল ব্যাপক প্রাণহানি ও সম্পদের বিশাল ক্ষয়ক্ষতি। ১৯৭০ ও ’৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি থেকেই বিষয়টি আঁচ করা যায়। কিন্তু সময় বদলেছে।

এখন নিজেদের সক্ষমতা ও সামর্থ্যরে সর্বোচ্চ ব্যবহারের ফলে দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ রোল মডেলের স্থানও পাচ্ছে অনেক দেশের কাছে। তবে তৃপ্তির ঢেকুর তুললে হবে না, নিজেদের ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনায় নিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের আরও সতর্ক হতে হবে। প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে যেন প্রাণ ও সম্পদহানি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা যায়, সে লক্ষ্যে কাজ করে যেতে হবে।

ফণীর প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতি যে একেবারেই হয়নি তা নয়। কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি খুলনাসহ উপকূলীয় বিভিন্ন জেলায় ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে ফসল তলিয়ে যাওয়া, কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়াসহ কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া ফণীর প্রভাবে বজ্রপাত, ঝড়ো হওয়ায় গাছের ঢাল ভেঙে পড়াসহ বিভিন্নভাবে অন্তত ১৮ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার বেড়েছে। এমন মৃত্যু কমিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার বিকল্প নেই। ফণীর প্রভাবে বানের পানিতে ফসল ডুবে গিয়ে এবং অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন যারা, তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং যেসব এলাকা বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে, সেসব এলাকার বাঁধ দ্রুত পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নিতে হবে।

ফণীর আঘাত মোকাবেলায় যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার এবং সমন্বিতভাবে কাজ করার নির্দেশ আগেই দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সংশ্লিষ্ট বিভাগের ছুটি বাতিল, এইচএসসি পরীক্ষা পেছানোসহ ত্রাণ ও দুর্যোগসংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দফতরগুলো ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য। এর ফলও পাওয়া গেছে। ভবিষ্যতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে আরও দৃঢ় ও আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আমরা আশাবাদী।

সম্পর্কিত পোস্ট

Add Comment

অন্যান্য সংবাদ

নিউজলেটার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন

আপনার ইনবক্সে সেরা খবর পেতে সাবস্ক্রাইব করুন । আমরা আপনাকে স্প্যাম করব না এবং আমরা আপনার গোপনীয়তাকে সম্মান করি।