প্রধানমন্ত্রীর ব্রুনাই সফর

Post Iamge

Advertise

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তিন দিনের ব্রুনাই সফর নানা দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। এ সফরকালে তিনি ব্রুনাইয়ের সুলতান হাজী হাসানাল বলকিয়ারের সঙ্গে বৈঠকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পাঁচ সদস্য রাষ্ট্রের সমন্বয়ে একটি নতুন আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ফোরাম গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন।

এ পাঁচটি দেশ হল- বাংলাদেশ, মালদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও ব্রুনাই।

আশার কথা, প্রস্তাবটির প্রতি ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন ব্রুনাইয়ের সুলতান। তিনি বলেছেন, তিনি বিষয়টি নিয়ে ‘অনুকূল বিবেচনা’ করবেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, একটি আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ফোরামের মাধ্যমে এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি হয়। দেশগুলোর মধ্যে গড়ে উঠতে পারে অভিন্ন শ্রমবাজারও। এসবের মধ্য দিয়ে ফোরামটি সফল হলে এর সুফল পেতে পারে ফোরামের প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রেরই জনগণ।

ব্রুনাই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্র হলেও তেল সম্পদে সমৃদ্ধ। অন্যদিকে বাংলাদেশও উচ্চ প্রবৃদ্ধির মধ্য দিয়ে উদীয়মান অর্থনীতির একটি রাষ্ট্র। প্রধানমন্ত্রীর সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ব্রুনাইয়ের উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

আমরা আশা করব দেশটির উদ্যোক্তারা এ ব্যাপারে এগিয়ে আসবেন। তাছাড়া ব্রুনাইয়ের সম্ভাবনাময় শ্রমবাজারে প্রচুর বাংলাদেশি কর্মীর চাহিদা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সফরের মধ্য দিয়ে সেখানে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য শ্রমবাজার সম্প্রসারিত হওয়ার সুযোগ তৈরি হতে পারে।

তবে অতীতে একশ্রেণীর প্রতারক দালাল চক্রের অপতৎপরতায় দেশটির শ্রমবাজার হুমকির মুখে পড়েছিল। দালাল চক্রের এ ধরনের অপতৎপরতা বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া জরুরি। বস্তুত একটি দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানের সফরের মধ্য দিয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে যেসব সম্ভাবনা তৈরি হয়, তা কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কূটনীতিকদের সক্রিয় উদ্যোগ। প্রধানমন্ত্রীর ব্রুনাই সফরের ফলে সৃষ্ট সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগাতে আমাদের কর্মকর্তা ও কূটনীতিকদেরও তৎপর হতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে সোমবার বাংলাদেশ ও ব্রুনাইয়ের মধ্যে কৃষি, মৎস্য, পশুসম্পদ, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া এবং এলএনজি সরবরাহের ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করার উদ্দেশ্যে সাতটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং একটি বিনিময় নোট।

সমঝোতা স্মারকগুলো হল- কৃষি ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি সহযোগিতা, মৎস্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা, পশুসম্পদ ক্ষেত্রে সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক ও শিল্প সহযোগিতা, যুব ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং এলএনজি সরবরাহে সহযোগিতা। আর বিনিময় নোটটি কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্ট হোল্ডারদের জন্য ভিসার ছাড় সংক্রান্ত।

বর্তমান যুগটি কানেকটিভিটির। এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করার মাধ্যমে উন্নয়নের যে ধারণা, তা আমরা ব্রুনাইয়ের সঙ্গেও গড়ে তুলতে পারি। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এমন অনেক পণ্যই রয়েছে, যা বৃহৎ আকারে আমদানি-রফতানির মাধ্যমে দুই দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হতে পারে। বস্তুত দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। আমরা ব্রুনাইয়ের সঙ্গে আমাদের ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্কের উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি প্রত্যাশা করছি।

সম্পর্কিত পোস্ট

Add Comment

অন্যান্য সংবাদ

নিউজলেটার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন

আপনার ইনবক্সে সেরা খবর পেতে সাবস্ক্রাইব করুন । আমরা আপনাকে স্প্যাম করব না এবং আমরা আপনার গোপনীয়তাকে সম্মান করি।