দিনের বেলা খোঁড়াখুঁড়ি করা যাবে না

রাজধানীতে দিনের বেলায় আর রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করা যাবে না। শুধু তাই নয়, বর্ষা মৌসুমে (মে, জুন, জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর) কোনো সড়ক মেরামত করা যাবে না। জরুরি প্রয়োজনে খনন করতে হলে খননকারী কর্তৃপক্ষকে মূল ক্ষতিপূরণসহ অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ ফি গুনতে হবে।
আর কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে খনন কাজ শুরু করলে মূল খরচের ৫ গুণ জরিমানা গুনতে হবে। এমনকি যে এলাকায় সড়ক খনন করা হবে সেখানে কমপক্ষে ৭ দিন আগেই মাইকিং করাসহ নানাবিধ প্রচার চালাতে হবে।
উল্লিখিত বিধান রেখে ‘ঢাকা মহানগরীর সড়ক খনন নীতিমালা-২০১৯’ খসড়া চূড়ান্ত করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (নগর উন্নয়ন) মো. মাহবুব হোসেন যুগান্তরকে জানিয়েছেন, স্টেক হোল্ডারদের মতামত নিয়ে গত সপ্তাহে নীতিমালাটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। শিগগিরই অনুমোদনের জন্য মন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হবে। মন্ত্রীর সম্মতিসাপেক্ষে চলতি মাসেই নীতিমালাটি কার্যকর করা হবে।
প্রস্তাবিত নীতিমালা অনুযায়ী, রাস্তার যে এলাকায় সড়ক খনন করা হবে সেই এলাকায় নাগরিকের সুবিধার্থে কমপক্ষে ৭ দিন আগেই সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করতে হবে। পাশাপাশি মাইকিং করাসহ স্থানীয়দের সহায়তা চেয়ে প্রচারপত্র বিলি করতে হবে। এছাড়া কেবল অপারেটরের মাধ্যমে প্রচার ও কাজ শুরুর কমপক্ষে ৩ দিন আগে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। একইসঙ্গে নাগরিকদের এ নিয়ে কোনো ধরনের অভিযোগ বা পরামর্শ দিতে সিটি কর্পোরেশন ও খননকারী সংস্থার নাম, ঠিকানা ও মোবাইল ফোন নম্বর সাইনবোর্ড আকারে কাজ শুরুর স্থানে টাঙিয়ে দিতে হবে। আধুনিক যন্ত্রপাতি সমন্বয়ে অভিজ্ঞ ঠিকাদার দিয়ে খনন কাজ করতে হবে। অনুমতি প্রদান, খনন ও রাস্তা পুনর্বাসনের কাজ সর্বোচ্চ তদারকি করতে ওয়ানস্টপ সমন্বয় সেল গঠন করতে হবে।
নীতিমালায় আরও বলা হয়, খননকারী সংস্থাকে খনন শুরুর তারিখ ও শেষের তারিখও সাইনবোর্ড দিয়ে সাইটে জানাতে হবে। খনন কাজে ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেলকে সহায়তার জন্য একাধিক মনিটরিং সেল কাজ করবে। সিটি কর্পোরেশন সেল সাচিবিক সহায়তা দেবে। রাস্তা খোঁড়ার নামে মাসের পর মাস কাজ ফেলে রাখা যাবে না। রাতের বেলায় খননের পর ওই দিন বা রাতের মধ্যেই আধুনিক খননসংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি দিয়ে পুনর্বাসন কাজ শেষ করে রাতের মধ্যেই যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে। খননের আগে রাস্তাটি যে অবস্থায় ছিল খননের পর সম্পূর্ণ আগের মতোই সরকারের পিপিআর মেনে উপযুক্ত, ঝকঝকে তকতকে করে তৈরি করে দিতে হবে, যাতে কোনোক্রমেই বোঝার উপায় না থাকে যে রাস্তাটি খনন করা হয়েছিল।
নতুন নীতিমালায় নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে রাস্তা খোঁড়ার কাজ শেষ না হলে আইনানুযায়ী জরিমানা দিতে হবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। এছাড়া যে কোনো সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে চাইলেই যে কোনো রাস্তা খননের অনুমতি দিতে পারবে না সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। এজন্য রাস্তার এস বিল্ট নকশা, স্পেসিফিকেশন, প্রয়োজনে এসব রাস্তার দলিলসহ যাবতীয় তথ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই অনুমতি দেবে সিটি কর্পোরেশন। এজন্য সিটি কর্পোরেশনকে তার সীমানার সব সেবাদানকারী সংস্থাকে হস্তান্তর করে সড়কের এস বেল্ট নকশা সংরক্ষণ করতে হবে। আবেদনের ২০ কর্মদিবসের মধ্যেই রাস্তা খননের অনুমতি দেয়া হবে। খননসংক্রান্ত সব তথ্য রাস্তার ওপর সাইনবোর্ড দিয়ে প্রকাশ করতে হবে।
বর্ষকালে রাস্তা খুঁড়তে হলে মূল ক্ষতিপূরণসহ অতিরিক্ত ৫০ ভাগ ফি জমা দিতে হবে। যুক্তিসঙ্গত কোনো কাজ শেষ করতে দেরি হলে কমপক্ষে ৫ দিন আগে সিটি কর্পোরেশনকে অবহিত করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রথম সাত দিনের জন্য কোনো জরিমানা করা হবে না, তবে এর বেশি দেরি হলে একভাগ হারে জরিমানা আরোপ করা হবে। নীতমালার শর্ত পূরণ না করলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কোনো সংস্থার অতি জরুরি মেইনটেনেন্সের জন্য সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলীর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে নিয়মানুযায়ী খনন কাজ করতে পারবে।
খননের পর মেরামত প্রসঙ্গে নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠান রাস্তা খননের পর ওই রাস্তার গর্তের মাঝে বালি দিয়ে ভালোভাবে ভরাট করতে হবে। ব্রিকসলিং ও হেরিংবন্ড দিয়ে যথাযথভাবে যান চলাচলের উপযোগী করতে হবে। এছাড়া খনন কাজ শেষে আশপাশের সারফেজ ড্রেন ধুয়েমুছে পরিষ্কার করে দিতে হবে। এমনভাবে পরিষ্কার করতে হবে যাতে কাজটি শুরু করার আগের অবস্থায় দেখা যায়। খননের সময় সংস্থা বা সাইটে অনুমতিপত্র সঙ্গে রাখবে ও চাহিবামাত্রই ট্রাফিক বিভাগকে দেখাতে হবে। অতিরিক্ত কোনো খনন কাজ হচ্ছে কিনা তা ট্রাফিক বিভাগ নজরদারি করবে।
নগরবাসীর অভিযোগ, যখন তখন রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কারণে রাজধানীবাসীকে ভয়াবহ দুর্ভোগ পোহাতে হয়। রাস্তায় যানজটের অন্যতম কারণও খোঁড়াখুঁড়ি। শীত কিংবা বর্ষা নয় যখন-তখন অলিগলি থেকে শুরু করে রাজপথ সর্বত্রই সারা বছরই রাস্তা খুঁড়তে দেখা যায়। কারও নির্দেশ না মেনে এমনকি সিটি কর্পোরেশনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েই চলছে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি। এ থেকে স্থায়ীভাবে নাগরিকদের দুর্দশা লাঘব করতে সরকার এই নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করছে। এটি কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে সড়ক খননের ফলে সারা বছরের সৃষ্ট জনদুর্ভোগ অনেকাংশে কমে আসবে বলে মনে করছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
Add Comment