দখল-দূষণে বিলীনের পথে খাল

Post Iamge

Advertise

দখল-দূষণে বিলীনের পথে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ খালগুলো। এ ছাড়া খালের তলদেশ ভরাট, অযত্ন-অবহেলা, সংস্কার ও খননের অভাবে নাব্যতা হারিয়ে ক্রমেই অস্তিত্ব হারাচ্ছে এক সময়ের খরস্রোতা ওইসব খাল।

নাব্যতা হ্রাসের কারণে অধিকাংশ খালেই এখন হাঁটুপানি। তাই খালে এখন আর নৌকায় ইট-বালুসহ অন্যান্য পণ্য পরিবহন করা যাচ্ছে না। তেঘরিয়ার খালগুলোর সঙ্গে বুড়িগঙ্গার সংযোগ রয়েছে।

বুড়িগঙ্গার পচা পানি ও কালীগঞ্জের ময়লা সরাসরি পানিতে মিশে যাচ্ছে বলে এখানকার খালের পানিও পচে দুর্গন্ধযুক্ত কালচে রং ধারণ করেছে। এতে ইউনিয়ন এলাকার চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে পানিবাহিত নানা রোগ।

তেঘরিয়া ইউনিয়নের বেয়ারা, বনগ্রাম, পশ্চিমদি কলাবাগান, পশ্চিমদি নাজিরপুর, নোয়াদ্দা, বাঘৈর, বাঘৈর নগর (ঋষিপাড়া, কদমপুর ও কলাকান্দি ও আবদুল্লাহপুরসহ ইউনিয়নের চারদিকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার খাল রয়েছে।

আর রাজেন্দ্রপুর, বাঘৈর নগর ঘাট ও পাইনা বাজার গুদারাঘাট নামে এখানে বড় ৩টি নৌকার ঘাট রয়েছে।

চারদিকে খালবেষ্টিত তেঘরিয়া। বর্তমানে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দখল ও নানা দূষণের কবলে পড়েছে এসব খাল। অন্তত ২শ’ জেলে পরিবারের জীবিকা নির্বাহ হতো খালগুলোকে কেন্দ্র করে। খালের অস্তিত্ব না থাকায় অধিকাংশ জেলে পরিবার এখন অন্যত্র চলে গেছে।

অভিযোগ রয়েছে, তেঘরিয়ায় এসব খাল দখলের প্রতিযোগিতায় নেমেছে কতিপয় অসাধু ব্যক্তি। আর ওয়ার্ডভিত্তিক ডাম্পিং স্টেশন না থাকায় অধিবাসীরা ঐতিহ্যবাহী খালগুলোতে ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভরাট করার প্রতিযোগিতায়ও নেমেছেন।

কয়েকটি স্থানে খালের জায়গা ভরাট করে বাড়িঘর পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়েছে। এমনভাবে খাল বিলীন হয়েছে দেখলে মনে হবে, এখানে কোনোদিন খালই ছিল না।

দখল ও ময়লা-আবর্জনা ফেলায় বৃষ্টি-বর্ষার পানি নামতে পারে না খালে। তাই নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ আর রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে মারাত্মকভাবে। পানির অভাবে ব্যাহত হচ্ছে ফসল উৎপাদন।

তাছাড়া এখানে পানির অভাবে অনেক পরিবার এখন আর গবাদি পশু পালন করছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও নজরদারির অভাবে খাল দখলমুক্ত ও সংস্কারে কার্যকরী পদক্ষেপ না থাকায় হতাশ এখানকার সচেতন মহল।

সরেজমিন দেখা গেছে, কৌশলে দখল আর অব্যবস্থাপনার কারণে মরে যাচ্ছে তেঘরিয়ার বুক চিড়ে চলে যাওয়া খালগুলো। বেশ কয়েকটি এলাকায় খালের জায়গা অবৈধ দখলেও চলে গেছে।

ইউনিয়নের ভৈরবনগর থেকে বেয়ারা পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার খাল ভরাট করে ফেলেছে দখলদাররা। এর মধ্যে ৭নং ওয়ার্ডভুক্ত বাঘৈরের তালগাছিয়া এলাকার হাটি ব্রিজের দুই পাশের জায়গাও অধিবাসীরা মাটি ভরাট করে পাকা বাড়িঘর নির্মাণ করেছেন।

ইউনিয়নের বাঘৈর থেকে পোড়াহাটি মসজিদ পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার খালের তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। এখানে পানির রং কালো ও দুর্গন্ধযুক্ত।

রাজেন্দ্রপুর থেকে পশ্চিমদি শ্যামপুর-নাজিরপুর পর্যন্ত ২ কিলোমিটার খাল ভরাট ও বেহাল অবস্থায় সরু হয়ে গেছে।

তাছাড়া পোড়াহাটি থেকে গবিন্দপুর পর্যন্ত ১ কিলোমিটার, জালখোলা মিষ্টার বাড়ি থেকে মনানিশপাড়া পর্যন্ত পৌনে ১ কিলোমিটার, পাইনা খালপাড় থেকে চেয়ারম্যানের ইটখলা পর্যন্ত কয়রার খালের ২ কিলোমিটার, করেরগাঁও ব্রিজ থেকে বাঘৈর পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার, বাঘৈর গইস্তা কবরস্থান থেকে উপজেলা চেয়ারম্যানের বাড়ি সংলগ্ন আইলাপাড়া পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার খাল শুকিয়ে গেছে।

কোথাও কচুরিপানায় ভরা, কোথাও খালের তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে, কোথাও আবার ৬০ ফুট খাল অপ্রশস্ত হয়ে ১০ থেকে ১৪ ফুটে পরিণত হয়েছে। কোথাও আবার ৬ থেকে ৮ ফুট নালায় পরিণত হয়েছে।

এদিকে তেঘরিয়া মিনার মসজিদ থেকে পূবদি, মনানিশপাড়া, নাজিরপুর ও জালখোলা হয়ে পোড়াহাটি গাং পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার প্রধান খাল তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। তাই এ খাল দিয়ে এখন নৌকা নিয়ে আসা যায় না।

এ ছাড়াও কদমপুর ও বনগ্রাম এলাকাসহ অভ্যন্তরীণ কিছু এলাকার খাল এখন বিলীন। তবে বেশ কয়েক বছর আগেও এসব খালের গৌরবময় অস্তিত্ব ছিল।

বাঘৈর এলাকার বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, বিভিন্ন কারণে কেরানীগঞ্জ উপজেলার খালগুলোই মরে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে মরে যাচ্ছে তেঘরিয়ার খাল।

তাই এখানকার ইরিগেশন ব্যবস্থাও হুমকির মুখে পড়েছে। নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে বন্যার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।

পশ্চিমদি এলাকার বাসিন্দা সিরাজ আহম্মেদ যুগান্তরকে বলেন, খালের পচা-দুর্গন্ধযুক্ত পানি ও খালের দুই পাড়ে নির্বিচারে আবর্জনা ফেলা হয় বলে দিন দিন মশার প্রজনন ক্ষেত্র বাড়ছে।

তাই সন্ধ্যা নামতেই মশার ভয়বহ উপদ্রব শুরু হয়। এই খালগুলো দখলে চলে যাওয়ায় এখানকার ইরিগেশন ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়েছে।

তেঘরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মো. জজ মিয়া যুগান্তরকে বলেন, এটি ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ একটি ইউনিয়ন পরিষদ এলাকা। তাই অভ্যন্তরীণ খালগুলোকে রক্ষা খুবই জরুরি।

ইতিমধ্যে তেঘরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ খালগুলোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালছে। তাছাড়া এলাকার সার্বিক উন্নয়নে ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায়ক্রমে কাজ করছে।

খুব শিগগির তেঘরিয়া ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ খাল খনন, সংস্কার ও নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে বলে আশা করি।

সম্পর্কিত পোস্ট

Add Comment

অন্যান্য সংবাদ

নিউজলেটার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন

আপনার ইনবক্সে সেরা খবর পেতে সাবস্ক্রাইব করুন । আমরা আপনাকে স্প্যাম করব না এবং আমরা আপনার গোপনীয়তাকে সম্মান করি।