দক্ষিণ পলাশপুর ও স্মৃতিধারা এলাকা: পানির জন্য হাহাকার

নগরির দক্ষিণ পলাশপুর, উত্তর পলাশপুর, জনতাবাগ, স্মৃতিধারা, মুক্তধারা, ইসলামবাগ, রসুলবাগ, গ্যাস রোড, রইসনগর ও মদিনাবাগ এলাকায় পানির জন্য হাহাকার চলছে। এসব এলাকায় কোথাও ২ মাস কোথাও ১৫ দিন ধরে পানি নেই।
দোকান ও ব্যক্তিগত পানির পাম্প থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করে কোনো রকমে বেঁচে আছেন বাসিন্দারা। নামাজের অজু ও গোসলেরও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে রমজান শুরুর পর পানি সংকট তীব্র হয়েছে।
অতিষ্ঠ হয়ে বাসিন্দারা ওয়াসার পাইপ থেকে পানি পেতে কাউকে তোয়াক্কা না করেই সিটি কর্পোরেশনের ঢালাই করা পাকা রাস্তা খুঁড়ছেন। ১০ থেকে ১৫ ফুট মাটির নিচে ওয়াসার পানির পাইপের সঙ্গে পাইপ সংযোগ করা হচ্ছে। এতে কিছুটা পানি মিলছে।
পানির দাবিতে কলসি হাতে নিয়ে বিক্ষোভ করার প্রস্তুতিও নিচ্ছে দক্ষিণ পলাশপুরের বাসিন্দারা। যাত্রাবাড়ী মডস জোন ৭ এ পানি সংকটের কথা বার বার জানানো সত্ত্বেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। পানির সমস্যা সমাধানের দাবি জানান বাসিন্দারা।
এলাকার ব্যক্তিগত গভীর নলকূপ, আত্মীয়-স্বজনের বাসা, কেউ আবার ক্রয় করে খাবার পানির সাময়িক সমস্যা মিটাচ্ছে। অনেকে দূরে
আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে গিয়ে কেউ কেউ ডোবায় গোসল করছে।
দক্ষিণ পলাশপুরসহ এলাকার বাসিন্দারা পানি সমস্যার বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার মডস জোন-৭ এর নির্বাহী পরিচালক বরাবর লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ করেছেন। কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
অভিযোগে আরও জানা যায়, জিয়া সরণি খালের সংস্কার কাজে পাটেরবাগ হতে দুটি পানির পাম্পের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। জনতাবাগ ও পলাশপুর পানির পাম্পের পানি দক্ষিণ পলাশপুর এলাকায় কম সরবরাহ হচ্ছে।
এর মধ্যে যে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে তাও কালো, ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত। যা ব্যবহারের অনুপযোগী। স্মৃতিধারা এলাকার বাসিন্দা কাকুলি যুগান্তরকে বলেন, এ এলাকায় ২ মাস ধরে পানির সমস্যায় ভুগছি।
এর আগে পানি ছিল, তবে সে পানি ছিল দুর্গন্ধ ও ময়লাযুক্ত। উপায়ান্তর না পেয়ে কোনো রকমে ওই পানি ব্যবহার করতাম। রমজান মাসে সারাদিন রোজা রেখে দূর-দূরান্ত থেকে এসে লাইন ধরে কলসে করে পানি নেই।
দক্ষিণ পলাশপুর এলাকার বাসিন্দা মো. মনির হোসেন যুগান্তরকে বলেন, সবকিছু সমস্যা সমাধান করা যায়। পানির সমস্যা সমাধান করা দুরূহ।
পলাশপুর এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া যুগান্তরকে বলেন, এলাকায় পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। মানুষ গোসল ও অজু করতে পারছে না।
দক্ষিণ পলাশপুর বায়তুর রিয়াজ জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার নিজাম উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, এলাকায় প্রায় ১৫ দিন পানি নেই। এক সপ্তাহ ধরে মসজিদেও পানি নেই। এতে রমজানে মুসল্লিদের নামাজের অজুতে সমস্যা হচ্ছে। তিনি দক্ষিণ পলাশপুর এলাকায় একটি পানির পাম্প স্থাপনের দাবি জানান।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ৬০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, পানির জন্য বাসিন্দাদের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই।
কাউন্সিলর হিসেবে বাসিন্দারা আমার কাছে আসে, তাদের সমস্যার কথা বলে। আমি আবার ওয়াসাকে জানাই। কিন্তু পানি সমস্যা সমাধান হচ্ছে না।
ঢাকা ওয়াসা মডস জোন-৭ এর নির্বাহী পরিচালক আবিদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় নলকূপ দিয়ে পানি উত্তোলন কমেছে। এতে চাহিদার সঙ্গে প্রাপ্তির বিশাল ব্যবধান তৈরি হয়েছে। এসব কারণেই নগরিতে পানির জন্য হাহাকার বিরাজ করছে।
গরমে পানির চাহিদা বেশি থাকায় এ সমস্যা বেশি হয়। তারপরও কোনো এলাকার গ্রাহকদের পানি সংকট দেখা দিলে তা সমাধানের জন্য আমরা চেষ্টা করি।
Add Comment