তুরাগে কলা পাকাতে কেমিক্যাল

Post Iamge

Advertise

তুরাগের সবক’টি বাজারে কলা পাকাতে প্রকাশ্যে মেশানো হচ্ছে কার্বাইড জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ। এতে কলার রং ১২ ঘণ্টার মধ্যেই হলুদ ও আকর্ষণীয় হয়ে যায়।

বিষাক্ত যে কেমিক্যাল মেশানো হচ্ছে তা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। কেমিক্যাল মিশ্রিত কলা খেয়ে জীবনহানির আশঙ্কাও থাকে।

রমজানে কলার প্রচুর চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে ও প্রশাসনের নজরদারির অভাবে অসাধু কলা ব্যবসায়ীরা এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।

জানা গেছে, তুরাগের প্রায় সব বাজারে প্রতিদিন ৫-৬ ট্রাক কলা গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসে।

তুরাগের বাজারগুলো ছাড়াও উত্তরা সেক্টরগুলোতে কলার দোকান রয়েছে শতাধিক। এসব কলার দোকানে প্রতিদিন কলা পাকানো ও কলার রং আকর্ষণীয় করার জন্য কার্বাইড বা কেমিক্যাল জাতীয় পদার্থ মেশানো হচ্ছে।

এসব বাজারে যেসব কলা বিক্রি করা হচ্ছে তার শতভাগ কলাই বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো। খুব তাড়াতাড়ি যাতে এসব কলা পেকে যায় তাই ব্যবসায়ীরা এই কেমিক্যাল মিশিয়ে থাকেন।

এমন দৃশ্য চোখে পড়বে তুরাগের বাউনিয়া, ধউর, কামারপাড়া, ফুলবাড়িয়া, দিয়াবাড়ী ও রানাভোলা কাঁচাবাজারসহ ছোট-বড় সব কয়টি বাজারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রানাভোলা বাজারের এক কলা ব্যবসায়ী বলেন, এসব পদার্থ মেশালে কলা দ্রুত পাকে ও খুব সুন্দর দেখায়। তাই কাস্টমাররা এসব কলা কিনে নিয়ে যান।

এতে আমাদের লাভ হয় বেশি। কৃত্রিমভাবে পাকানো কলা খুব দ্রুত পচেও যায়। এসব পদার্থ মেশানো কলা খেলে মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়- এমন প্রশ্নের জবাবে এই ব্যবসায়ী বলেন, সবার দেখাদেখি আমিও মেশাই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ব্যবসায়ী দুই মাস আগে তুরাগের রানাভোলা বাজারে স্বল্প পুঁজি নিয়ে শুরু করছেন কলা ব্যবসা। কেমিক্যাল মেশানোর প্রক্রিয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কলা আমরা অনেক দূর থেকে নিয়ে আসি।

আসতে আসতে তিন দিন লেগে যায়। আনার পর একটি বদ্ধ ঘরে রেখে রাসায়নিক ছিটানো হয়। ছিটানোর ফলে এই কলা তাড়াতাড়ি পেকে যায়। আমাদের বিক্রি করতেও সুবিধা হয়।

তাই তারা একসঙ্গে কলা পাকাতে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করেন। অন্য আরও একজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখন পর্যন্ত তেমন কোনো সমস্যা বা অভিযোগ আসেনি। তাই চোখ বন্ধ করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, কেমিক্যাল মেশানোর প্রক্রিয়া ছাড়া কেউ ব্যবসা চালাতে পারবে না।

তুরাগের কামারপাড়া বাজারে নিয়মিত বাজার করেন টঙ্গীর মো. সেলিম খান। তিনি বলেন, যারা খাদ্যদ্রব্যে এসব কেমিক্যাল মেশায় তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এতে দিনদিন রাসায়নিক মেশানো বেড়ে চলছে।

পবিত্র রমজানেও থেমে নেই তাদের কর্মকাণ্ড। এসব কেমিক্যাল মিশ্রিত খাবার খেয়ে মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার ২৫০ শয্যা সরকারি হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মো. পারভেজ আহম্মেদ বলেন, বিষাক্ত এসব দাহ্য পদার্থ মিশানো কলা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

সঙ্গে সঙ্গে বমিভাব ও ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। কেমিক্যাল মিশ্রিত কোনো খাদ্য গ্রহণ করলে তার প্রভাব পড়ে লিভার ও কিডনির ওপর।

তিনি বলেন, ওই সব খাদ্য গ্রহণের পরে তা দাহ্যে পরিণত হওয়ার পর নিঃসরণ ঘটে লিভার এবং কিডনির মাধ্যমে। ফলে কেমিক্যাল মেশানো খাদ্য শরীরের এ দুটি অংশের ওপর প্রভাব ফেললেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কিডনিকেই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করে।

র‌্যাব-১-এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারোয়ার আলম যুগান্তরকে বলেন, আগের তুলনায় বর্তমানে কলায় কেমিক্যাল দেয়ার প্রবণতা কমে আসছে।

তবে কলার মধ্যে যদি রাসায়নিক কেমিক্যাল মিশিয়ে কলা পাকানো হয় তাহলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

তুরাগ থনার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. নুরুল মোত্তাকিন যুগান্তরকে বলেন, তুরাগ এলাকায় কলা কেমিক্যাল মিশিয়ে পাকানো হচ্ছে- এমন অভিযোগ পাইনি। খোঁজ নিয়ে দেখব। এমন অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

Add Comment

অন্যান্য সংবাদ

নিউজলেটার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন

আপনার ইনবক্সে সেরা খবর পেতে সাবস্ক্রাইব করুন । আমরা আপনাকে স্প্যাম করব না এবং আমরা আপনার গোপনীয়তাকে সম্মান করি।