ট্রাম্পকে ইরান যুদ্ধে ফুঁসলাচ্ছে সৌদি আরব-ইসরাইল

মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে আনতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, রিপাবলিকান শীর্ষ নেতারা এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বস্ত বন্ধু ইসরাইল ও সৌদি আরব ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কানপড়া দিচ্ছে ট্রাম্পকে, ফুঁসলাচ্ছে।
তেলআবিব ও রিয়াদের নেতারা এটা বুঝাচ্ছেন যে, ইরানের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক ভঙ্গুর এবং দেশটিকে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে চাপে রাখাই আমাদের নিরাপত্তার জন্য ভালো হবে। প্রয়োজনে সামরিক হস্তক্ষেপ দিয়ে তেহরানকে দমিয়ে রাখতে হবে। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী টেলিভিশন এনবিসি নিউজের এক বিশেষ প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের ইরান আগ্রাসনের পেছনের কারণ তুলে ধরা হয়েছে। ২০১৭ সালে ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন এক সমাবেশে বলেছিলেন, ইরানের উগ্র মনোভাব এখনও পরিবর্তন হয়নি।
বোল্টনের পরামর্শ ট্রাম্প আমলে নিয়েছেন কিনা তা স্পষ্ট নয়। ট্রাম্পের ক্ষমতার প্রথম বছরেই তার মন্ত্রিসভার প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিস, পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এইচআর ম্যাকমাস্টার ইরানের সঙ্গে সম্পাদিত পরমাণু চুক্তি প্রত্যাহারের পরামর্শ দিয়েছিলেন। গত বছর ট্রাম্প সে পরামর্শের বাস্তবায়ন করেছেন। ২০১৫ সালে সম্পাদিত ছয় জাতির পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন ট্রাম্প।
বর্তমানে ম্যাটিস, টিলারসন তার মন্ত্রিসভায় নেই। কিন্তু তাকে কুমন্ত্রণা দেয়ার মতো ব্যক্তির অভাব নেই। পাশাপাশি ইসরাইল ও উপসাগরীয় আরব রাষ্ট্রের নেতারাও ইরানের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের কান ভারি করছেন। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর জন্য ইরান ও দেশটির মতবাদ হুমকিস্বরূপ।
তাই ট্রাম্পের পূর্বসূরিদের কাছেও ইরানকে মারাত্মক হুমকি হিসেবে উপস্থাপন করেছেন নেতানিয়াহু। বর্তমানে ট্রাম্পের সঙ্গেও নেতানিয়াহুর বেশ দহরম মহরম। নিউ আমেরিকান সিকিউরিটি সেন্টারের জ্যেষ্ঠ ফেলো ইলান গোল্ডেনবার্গ বলেন, ‘ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারলে রাজনৈতিকভাবেই লাভবান হবে নেতানিয়াহু।’ তিনি আরও বলেন, ‘নেতানিয়াহুর মতে, ইরানের সঙ্গে সমঝোতায় যাওয়ার কোনো পথই খোলা নেই। একমাত্র সমাধান হল ইরানের শাসনব্যবস্থা পুরো পরিবর্তন করা অথবা দেশটিকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করানো।’
সৌদি আরবের কাছেও ইরান পরমাণু চুক্তির কোনো মূল্য নেই। দেশটির সাবেক কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজপরিবারের ক্ষমতা ও মর্যাদার জন্য ইরানকে হুমকি মনে করে সৌদি আরব। রিয়াদের ভয় হল, শিয়াপন্থী ইরান সৌদি আরবের শিয়াদের উসকে দিয়ে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার পরিকল্পনা করছে এবং ইয়েমেনে হুথিদের সহায়তা দেয়া এ কৌশলের একটি অংশ।
২০১৬ সালে শিয়া নেতাকে ফাঁসি এবং মোহাম্মদ বিন সালমানের উত্থানের পর থেকে ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিন সালমান ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জোরদার করেছেন। তেহরানের সঙ্গে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কূটনৈতিক নীতির ঘোর বিরোধিতা করেছে সৌদি আরব। ট্রাম্পের ইরাননীতি রিয়াদকে স্বস্তি দিয়েছে। ইরানকে তেল-গ্যাসে বেকায়দায় ফেলতে দেশটির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপে হোয়াইট হাউসের সঙ্গে আঁতাত বজায় রেখে চলছে সৌদি আরব।
ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ উত্তেজনার মধ্যে ইরাকে কর্মরত কর্মকর্তাদের দেশে ফিরে আসার নির্দেশনা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট জানায়, বাগদাদের মার্কিন দূতাবাস ও ইরবিলে মার্কিন কনস্যুলেটের অজরুরি কর্মকর্তাদের দ্রুত ইরাক ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হচ্ছে। তবে কতজন কর্মকর্তা ইরাক ছাড়বেন সে সংখ্যা জানা যায়নি।
Add Comment