টাইগারদের শিরোপা জয়

আয়ারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজে বাংলাদেশের শিরোপা জয়ের বিষয়টি নানা দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। এর আগে টি ২০ ও ওয়ানডে মিলে ছয়টি টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ। এশিয়া কাপের ফাইনালসহ একাধিকবার শিরোপা জয়ের কাছাকাছিও গেছে; কিন্তু প্রতিবারই কোনো না কোনোভাবে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। তাই শিরোপা না পাওয়ার আক্ষেপ ছিল টাইগারদের। অবশেষে সে আক্ষেপ খুব ভালোভাবেই ঘুচেছে দেশের বাইরে, প্রথমবারের মতো কোনো ফাইনালে উঠে ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের শিরোপা জয়ের মধ্য দিয়ে।
আশার কথা, প্রথম শিরোপার স্বাদ পাওয়া গেছে যোগ্য দল হিসেবে খেলেই। বৃষ্টির বাগড়ায় যদি ম্যাচ পরিত্যক্তও হতো, তারপরও অপরাজিত হিসেবে ফাইনালে ওঠায় বাংলাদেশই পেত এ ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের শিরোপা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভালো খেলেই ২৪ ওভারে ২১০ রানের কঠিন টার্গেট উতরে গেছে বাংলাদেশ। এমন রোমাঞ্চকর জয়ের মধ্য দিয়ে প্রথম শিরোপা উপহার দেয়ায় খেলোয়াড়, কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমাদের আন্তরিক অভিনন্দন।
প্রথম শিরোপাটি এমন একসময় এলো যখন ক্রিকেট বিশ্বকাপ দোরগোড়ায়। সৌম্য সরকার ও মোসাদ্দেক হোসেনের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে শিরোপা জিতে নেয়ার বিষয়টি টিমকে স্বস্তি এনে দিয়েছে সন্দেহ নেই। অবশ্য ২৪ ওভারে ২১০ রান তাড়া করতে হলে ঝড়ো ব্যাটিং তথা ওয়ানডে ক্রিকেটে টি ২০ মানের ব্যাটিংয়ের বিকল্পও ছিল না। সে পথেই শুরু থেকে হেঁটেছেন সৌম্য, তামিমসহ অন্যরা।
একসময় নিয়মিত বিরতিতে উইকেটের পতন ভয় ধরিয়ে দিলেও সৌম্যর ৪১ বলে ৬৬ রানের ভিত গড়ে দেয়া ম্যাচে মোসাদ্দেকের ২৪ বলে অপরাজিত ৫২ রানের ইনিংস জয় নিশ্চিত করেছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একটি শিরোপার যেমন দরকার ছিল টাইগারদের, তেমনি বিশ্বকাপের আগে এমন জয় দলের খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেবে নিশ্চয়ই। বিশেষত কিছুদিন থেকে ভালো পারফরম্যান্সের খরার মধ্যে এ জয় হতাশা কাটিয়ে জোরালো আত্মবিশ্বাস নিয়ে বিশ্বকাপের মাঠে নামতে সহায়তা করবে টাইগারদের।
শিরোপার খরা ঘোচানোর ম্যাচটিতে বাড়তি যে পাওয়া তা হল, নিয়মিত ম্যাচ উইনারদের বাইরে মোসাদ্দেকের হাত ধরে এসেছে বিজয়। শুধু তাই নয়, শেষ মুহূর্তে তার এক ওভারে ২৫ রান তোলা পরীক্ষিত ম্যাচ উইনারের পারফরম্যান্স বলতে হবে। তামিম, সাকিব ও মাশরাফির মতো হাতেগোনা কয়েকজন ম্যাচ উইনারের বাইরে নতুন ম্যাচ উইনার তৈরি হওয়া সামগ্রিকভাবে দলের পারফরম্যান্সের উন্নতি বলতে হবে এবং এভাবে বেশি ম্যাচ উইনার প্লেয়ার থাকার অর্থ বেশি বেশি ম্যাচ জয় এবং আমাদের ক্রিকেটের আরও উন্নতি।
সাকিবের মতো পরীক্ষিত-অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের অনুপস্থিতি এবং ১৮ রানে তামিমের ফিরে যাওয়ার পরও মাত্র ২৪ ওভারে ৫ উইকেটে ২১০ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয় ছিনিয়ে নেয়া সে ইঙ্গিতই দেয়। যদিও ক্রিকেট দলবদ্ধ খেলা, তারপরও ব্যক্তিগত ভালো পারফরম্যান্স ছাড়া দলবদ্ধ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন যে কঠিন, তা আমরা আগে একাধিকবার দেখেছি। প্রথম শিরোপা জয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ দল পর্যায়ক্রমে আরও ভালো খেলবে এবং ধীরে ধীরে শিরোপা জয়কে অভ্যাসে পরিণত করবে- এটাই প্রত্যাশা।
Add Comment