চালকদের ত্রুটিপূর্ণ দৃষ্টিশক্তি

সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে চালকের অদক্ষতা, উদাসীনতা ও বেপরোয়া মনোভাবকে দায়ী করা হয়ে থাকে। কেউ কেউ অন্য অনেক কারণকে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
সড়ক দুর্ঘটনার আরও যত কারণই থাকুক না কেন- আন্তরিকতা ও দক্ষতার মাধ্যমে একজন চালক বড় ধরনের দুর্ঘটনাও এড়াতে সক্ষম হন। কিন্তু আন্তরিকতা ও দক্ষতা দিয়ে একজন চালক তার অক্ষমতা দূর করতে পারেন না। ঢাকার বাসচালক ও তাদের সহকারীদের ৫০ শতাংশই চোখের নানা রকম সমস্যায় ভুগছেন।
সম্প্রতি রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় গবেষণার মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য উল্লেখ করে বক্তারা বলেছেন, ঢাকার বাসচালক ও তাদের সহকারীদের ৯৪ শতাংশই মনে করেন, তাদের চোখে সমস্যা আছে। অথচ তাদের ৭২ শতাংশ জীবনে একবারও চোখের চিকিৎসকের কাছে যাননি।
এদের মধ্যে ১২ শতাংশের চোখে ছানির কারণে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। এসব তথ্য থেকেই অনুমান করা যায়, ঢাকার বাসচালক ও তাদের সহকারীরা জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত না হলে সাধারণত চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার দরকার মনে করেন না।
কোনো বাসচালক ও তার সহকারী শারীরিক ও মানসিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ না হলে মুহূর্তের মধ্যেই ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। কাজেই বাসচালক ও তাদের সহকারীকে বোঝাতে হবে, শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা নিয়ে তারা যেন দায়িত্ব পালন না করেন। পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার পরই যেন কাজে যোগদান করেন।
জানা গেছে, দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাসচালক ও তাদের সহকারী দৈনিক ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা কাজ করেন। টানা এতটা সময় দায়িত্ব পালন করলে স্বাভাবিকভাবেই দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
একজন চালকের ভুল কিংবা উদাসীনতার সঙ্গে যেহেতু অনেক মানুষের জীবন-মৃত্যুর বিষয়টি জড়িত, তাই আন্তর্জাতিকভাবে অনুমোদিত ও বাস্তবসম্মত সময়ের চেয়ে বেশি সময় যাতে পরিবহন শ্রমিকদের কাজ করতে না হয়, তা কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে। পরিবহন শ্রমিকদের জীবনমান ঠিক না থাকলে দুর্ঘটনার হার বেড়ে যেতে পারে।
পরিবহন শ্রমিকদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি মানবিক মূল্যবোধ সম্পর্কেও তাদের সচেতন করে তুলতে হবে। এ বিষয়ে পরিপূর্ণ প্রশিক্ষণের অভাব থাকলে তাদের কাছে কাক্সিক্ষত আচরণ পাওয়ার বিষয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাবে।
দেশে যত যানচালক ও তাদের সহকারী রয়েছেন- তাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করা না হলে দুর্ঘটনা বৃদ্ধির পাশাপাশি অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের আশঙ্কাও বেড়ে যেতে পারে।
Add Comment