চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে জাহাজ জটে বড় ক্ষতি

Post Iamge

Advertise

ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে টানা তিন দিন কার্যক্রম বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম বন্দরে তীব্র জাহাজজটের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বহির্নোঙরে দীর্ঘ হচ্ছে জাহাজের সারি, বন্দর ইয়ার্ডে সৃষ্টি হয়েছে আমদানি পণ্যবোঝাই কনটেইনারের জট। একই চিত্র মোংলা বন্দরেও। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানি পণ্য খালাস নিতে না পারা ও রফতানি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তিন দিনে বিপুল ক্ষতি হয়েছে। তবে তা টাকার অঙ্কে নিরূপণ করা সম্ভব নয়।

দুর্যোগ কেটে যাওয়ায় শনিবার বিকালে চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরীণ রেড অ্যালার্ট-৩ প্রত্যাহার করা হয়েছে। বিকাল থেকে বন্দরে সীমিত পরিসরে কনটেইনার ডেলিভারি শুরু হয়েছে। আজ থেকে পুরোদমে বন্দর সচল হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে আজকেরসহ চার দিনের চাপ সামলাতে বড় ভোগান্তির শঙ্কাও করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বন্দরে জাহাজজট ও কনটেইনারজট দুটিই সৃষ্টি হবে।

মোংলা বন্দরে অভ্যন্তরীণ রেড অ্যালার্ট-২ প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে শনিবার পণ্য খালাস বা কনটেইনার সরবরাহ শুরু হয়নি। আজ থেকে শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর আগে মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরের জন্য আবহাওয়া অধিদফতর ৭ নম্বর বিপদ সংকেত প্রত্যাহার করে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত জারি করে। চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য ৬ নম্বর বিপদ সংকেত প্রত্যাহার করে জারি করা হয় ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত।

চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে আমদানি কনটেইনার ধারণক্ষমতা ৩৭ হাজার ৬২০ টিইইউএস (টোয়েন্টি ফিট ইকুইভেলেন্ট ইউনিটস)। এর বিপরীতে শনিবার আমদানি কনটেইনার ছিল ৩৬ হাজার ১৯৩ টিইইউএস, যা ধারণক্ষমতা ছুঁই ছুঁই।

চট্টগ্রাম বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান, জেটিতে ভিড়তে (বার্থিং) এ মুহূর্তে অপেক্ষায় আছে অনেক জাহাজ। জেটি সংকট থাকায় একটি নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি জাহাজকে একসঙ্গে ভেড়ানো সম্ভব হয় না। তাই সময়মতো ভিড়তে না পেয়ে বহির্নোঙরে দীর্ঘ সময় অলস বসে থাকতে হবে আমদানি পণ্যবোঝাই অনেক জাহাজকে। আবার বহির্নোঙরে পণ্য খালাসেও সমস্যা দেখা দিতে পারে।

খোলা পণ্যের একটি বড় অংশ বহির্নোঙরে লাইটার জাহাজের মাধ্যমে খালাস করা হয়। বর্তমানে বহির্নোঙরে যে পরিমাণ মাদার ভেসেল (সমুদ্রগামী বড় আকারের জাহাজ) রয়েছে, সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় লাইটার (ছোট আকারের জাহাজ) একসঙ্গে পাওয়া যাবে না। এ অবস্থায় দেখা দিতে পারে ভয়াবহ জট, যা ছাড়াতে সময় লেগে যেতে পারে এক থেকে দুই সপ্তাহ। বন্দরে জাহাজের অতিরিক্ত সময় অবস্থানের কারণে বেড়ে যেতে পারে পণ্যের আমদানি ব্যয়ও।

বন্দর সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বন্দরের জন্য ৬ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করে আবহাওয়া অধিদফতর। এর পরিপ্রেক্ষিতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ওইদিন সকাল থেকে জেটি ও বহির্নোঙরে জাহাজে পণ্য ওঠানামা বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। জেটিতে অবস্থানরত ২১টি জাহাজকে নিয়ে যাওয়া হয় বহির্নোঙরে। জারি করা হয় বন্দরের নিজস্ব অ্যালার্ট-৩। বৃহস্পতিবার অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণার সময় বন্দরের বহির্নোঙরে অবস্থান করছিল ৫৯টি আমদানি পণ্যবোঝাই মাদার ভেসেল।

শনিবার এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৮তে। এর মধ্যে কনটেইনার জাহাজ ২৪টি, সাধারণ কার্গোবোঝাই ১৯টি, খাদ্যশস্যবোঝাই ৮টি, সারবোঝাই ২টি, সিমেন্ট ক্লিংকারবোঝাই ২১টি, চিনিবোঝাই ৪টি, লবণবোঝাই ১টি এবং ৯টি অয়েল ট্যাংকার রয়েছে। দুই-তিন দিনে আরও ২০-২৫টি জাহাজ বন্দরের বহির্নোঙরে এসে পৌঁছতে পরে। তখন জাহাজের সংখ্যা আরও বাড়বে। স্বাভাবিক অবস্থায় বন্দরের বহির্নোঙরে ৫০-৫৫টি আমদানি পণ্যবোঝাই জাহাজ থাকে।

চট্টগ্রাম ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের (সিএন্ডএফ) যুগ্ম সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু যুগান্তরকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার থেকে জাহাজে পণ্য ওঠানামা বন্ধ রাখা হয়। যেসব জাহাজ পাইপলাইনে ছিল সেগুলোও এর মধ্যে বহির্নোঙরে এসে গেছে। দুই-তিন দিনে আরও জাহাজ আসবে। ফলে জেটিতে আসার সিরিয়াল পেতে জাহাজগুলোকে বহির্নোঙরে অপেক্ষা করতে হবে।

এ অবস্থায় জাহাজজট দেখা দেবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। দু-এক বছর আগে এমন অবস্থা হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করত। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বন্দরে বেশ কিছু নতুন ইকুইপমেন্ট যোগ হওয়ায় পণ্য হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি বেড়েছে। তাই এই জট আগের মতো দীর্ঘমেয়াদি না-ও হতে পারে।’

আমদানিকারকরা জানান, একেকটি মাদার ভেসেলকে একদিন অতিরিক্ত সময় অবস্থানের জন্য প্রায় ১০ হাজার মার্কিন ডলার পরিশোধ করতে হয়। জাহাজ মালিক ও এজেন্টরা এ টাকা আমদানিকারকদের কাছ থেকে নেন। এতে পণ্যের আমদানি ব্যয় বেড়ে যায়। আমদানিকারকরা নিজের পকেট থেকে ওই টাকা দেন না। পণ্যের মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করে নেন। তাই ওই বাড়তি অর্থ শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের ঘাড়েই চাপে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক যুগান্তরকে বলেন, ‘বন্দরের জেটিতে একসঙ্গে ১৯টি জাহাজ হ্যান্ডলিং করা যায়। তাই বহির্নোঙরে অবস্থানরত জাহাজগুলোকে বার্থিং পেতে কিছুটা সময় অপেক্ষা করতেই হবে। এটা প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য হয়েছে। তবে আমরা প্রস্তুত আছি। জেটিতে বেশির ভাগ কনটেইনার জাহাজই ভেড়ানো হয়। খোলা কার্গো বেশির ভাগ খালাস করা হয় বহির্নোঙরে। নতুন নতুন ইকুইপমেন্ট সংযোজনের ফলে কনটেইনার খালাসে বন্দরে আগের চেয়ে গতি অনেক বেড়েছে। আশা করছি, খুব বেশি সমস্যা হবে না। আমরা দ্রুতই এ সমস্যা মোকাবেলা করতে সক্ষম হব।’

ওমর ফারুক আরও জানান, জাহাজে পণ্য ওঠানামা বন্ধের পাশাপাশি টানা তিন দিন ইয়ার্ড থেকে আমদানি পণ্যবোঝাই কনটেইনার ডেলিভারিও বন্ধ ছিল। তাই ইয়ার্ডে এ ধরনের কনটেইনারের সংখ্যাও স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেড়ে গেছে।

মোংলা বন্দেরের হারবার মাস্টার কমান্ডার দুরুল হুদা শনিবার বিকালে যুগান্তরকে জানান, ঘূর্ণিঝড়-পরবর্তী সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছি। বন্দরে জারি করা অ্যালার্ট-২ প্রত্যাহার করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতরের ৭ নম্বর বিপদ সংকেত প্রত্যাহার করা হলেও বন্দরের কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি। আবহাওয়া অনুকূলে আসতে কিছুটা সময় লাগছে। কাল (আজ) নাগাদ বন্দরের কার্যক্রম ও বাণিজ্যিক জাহাজের পণ্য খালাস-বোঝাই শুরু করা সম্ভব হবে।

সম্পর্কিত পোস্ট

Add Comment

অন্যান্য সংবাদ

নিউজলেটার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন

আপনার ইনবক্সে সেরা খবর পেতে সাবস্ক্রাইব করুন । আমরা আপনাকে স্প্যাম করব না এবং আমরা আপনার গোপনীয়তাকে সম্মান করি।