ঘূর্ণিঝড় ফনি: সতর্ক উপকূলীয় সব জেলা

ঘূর্ণিঝড় ‘ফনি’ মোকাবেলায় বাংলাদেশ প্রস্তুত রয়েছে। ভারতের উপকূলে ঘূর্ণিঝড় ‘ফনি’ আঘাত হানার পর কিছুটা দুর্বল হয়ে আগামী ৪ মে বাংলাদেশে আঘাত হানতে পারে। তাই এটি মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এই সঙ্গে উপকূলের সব আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
বাগেরহাট: উপকূলের দিকে ধেয়ে আসা প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফনি মোকাবেলায় বাগেরহাট জেলা প্রশাসন বিকালে প্রস্তুতি সভা করেছে। বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাসের সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় জানানো হয়, বাগেরহাট জেলার ২৩৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখাসহ জেলা সদর ও ৯টি উপজেলার প্রতিটিতে একটি করে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ১০টি মেডিকেল টিম। সব সরকারি কর্মকতা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
একই সঙ্গে রেড ক্রিসেন্ট, ফায়ার সার্ভিস ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কয়েকশ’ স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার দূরুল হুদা জানান, মোংলা বন্দরে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ফনি মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। বন্দর জেটি ও আউটার অ্যাংকরেজে অবস্থানরত ১৫ জাহাজ নিরাপদে রয়েছে। ঘর্ণিঝড়ের সংকেত ৫ নম্বরে উঠলেই বন্দরের পণ্যবোঝাই ও খালাসের কাজ বন্ধ করে দেয়া হবে। জাহাজগুলোকে জেটি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে নির্দেশ দেয়া হবে।
সুন্দরবনে পূর্ব বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান জানান, ঘূর্ণিঝড় ফনির আগাম প্রস্তুতি হিসেবে সুন্দরবন বিভাগের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে তাদের আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদসহ নিরাপদে থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, সুন্দরবনের করমজল ও হারবাড়ীয়া পর্যটন কেন্দ্রের পর্যটকদের সরিয়ে আনা হচ্ছে।
মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর): বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ফনির সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এবং দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিএম সরফরাজের সভাপতিত্বে এ সভা হয়।
সভায় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব মো. মসিউর রহমান, সিপিপির সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিল ফরাজী, আবদুস সোবাহান শরিফ, রফিকুল ইসলাম রিপনসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, সিপিপির সহকারী পরিচালক ইকবাল হোসেন উপ পুলিশ পরিদর্শক সওকত হোসেন প্রমুখ।
সভায় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যলয়কে কন্ট্রোল রুম ঘোষণা, উপজেলার পূর্বঘোষিত ৫২টি স্থান দুর্যোগকালীন আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে নির্ধারণ ও ইউনিয়ন পর্যায়ে নতুন করে আশ্রয় কেন্দ্র করা, নদী তীরবর্তী এলাকায় মাইকিং করে স্থানীয় জনসাধারণদের সর্তক ও নিরাপদ আশ্রয় নিয়ে আসা, নদী তীরবর্তী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সাপলেজা ,বেতমোর. আমরাগাছিয়া, বড়মাছুয়া, তুষখালী সর্বোচ্চ সতর্ক থেকে বাঁধের নিকটবর্তী জনসাধারণকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার পদক্ষেপ গ্রহণ করা, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে মেডিকেল টিম গঠন করে তার তালিকা কন্ট্রল রুমে প্রেরণ করা, দুর্যোগকালীন দমকল কর্মী, সিপিপি, রেডক্রিসেন্ট ও অন্যান্য কমিউনিটি স্বেচ্ছাসেবীদের সাহায্য করা ও আইন শৃখলা বাহিনির সদস্যদের নিকট হতে সাহায্য গ্রহণ করা, উপজেলা পরিষদের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ছুটি বতিলসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়।
সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জি এম সরফরাজ বলেন, মঠবাড়িয়া উপজেলা উপকূলীয় এলাকা হওয়ায় বিগত বছরগুলোতে সিডর, আইলাতে প্রানহানী ঘটেছে তাই আসন্ন ফনি মোকাবেলায় সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।
পটুয়াখালী: পটুয়াখালীতে ঘূর্ণিঝড় ফনির প্রভাব মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিটি উপজেলায় কন্টোল রুম খোলা হয়েছে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েকটি জরুরি সভাও করা হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যদের নিয়ে এসব সভায় ফনির প্রভাব মোকাবেলায় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়ার পাশাপাশি কার্যকর পদক্ষেপে অগ্রগতির খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে।
ইউনিয়ন পর্যায়ে সার্বিক অবস্থার খোঁজ নিতে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি ও ইউপি সচিবদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। চর এলাকার লোকজনদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ট্রলার ও স্পিডবোড।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, দুর্যোগকালীন সময় জেলা ৮টি উপজেলার ৭৪টি ইউনিয়নে জনগণের জান-মাল রক্ষায় করণীয় বিষয়ে প্রস্তুতিমূলক বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তায় গ্রাম পুলিশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ফনির প্রভাব মোকাবেলায় খাদ্য বিভাগের বিভিন্ন গোদামে চাল মজুদ রয়েছে। ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ, উপজেলা প্রশাসনের বরাদ্দ ও জেলা পরিষদের জরুরি ফান্ডসহ ১১৩টি মেডিকেল টিম, ৮টি ভ্যাটানারি টিম, সিপিপি, রেডক্রিস্টেন্ট, ফায়ার সার্ভিসের কমিউনিটি ভলান্টিয়ার ও বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছাসেবকদল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি সম্ভাব্য দুর্যোগকালীন সময়ে গবাদিপশুর আশ্রয়ের জন্য মাটির কেল্লাও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ভোলা: ঘূর্ণিঝড় ফনি মোকাবেলায় ভোলাতে ৬৫৭টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ৮টি কন্ট্রোল রুম প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়াও সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় ২২টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি ১০ হাজার ২০০ স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তুত রয়েছেন। ইতিমধ্যে উপকূলীয় চর ও দুর্গম এলাকায় সচেতনতামূলক প্রচারণাও শুরু হয়েছে।
ভোলার জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস, জেলা পুলিশ, নৌ পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও প্রতিবন্ধীদের সহায়তায় সাত উপজেলায় ৮০ সদস্যের ৮টি টিম গঠন করা হয়েছে।
অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে ভোলা জেলা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিট। এ উপলক্ষে বুধবার বিকালে আলাদা সভা করেন জেলা প্রশাসক ও ভোলা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিট।
সাতক্ষীরা: ঘূর্ণিঝড় ফনির সম্ভাব্য প্রভাব মোকাবেলায় সাতক্ষীরা জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাতক্ষীরা সার্কিট হাউজে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে বুধবার সন্ধ্যায় এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় জানানো হয়, উপকূলীয় জেলা হওয়ায় ঘূর্ণিঝড় ফনি সাতক্ষীরায় প্রচুর ক্ষতি হতে পারে। এজন্য ফনির সম্ভাব্য প্রভাব মোকাবেলায় সবাইকে সর্তক করা হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলায় ৪নং সতর্ক সংকেত দেয়া হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার জেলে-বাওয়ালীদের পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নদীতে মাছ ধরা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
সভায় জানানো হয়, জেলার ১৩৭টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। প্রত্যেক ইউনিয়নে মেডিকেল টিম ও স্বেচ্ছাসেবক টিমের প্রস্তুতি, ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ সংস্কার, শুকনা খাবার মজুদ রাখা, ওষুধের পর্যাপ্ততা নিশ্চিতকরণসহ দুর্যোগ মোকাবেলায় সম্ভাব্য সব প্রস্তুতি নিশ্চিত করা হয়েছে।
Add Comment