ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ঘাটতি ২৪ হাজার কোটি টাকা

Post Iamge

Advertise

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে বিনিয়োগে প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা (২৩ হাজার ৭০০ কোটি) ঘাটতি রয়েছে। যা বাংলাদেশের জন্য নিম্ন আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হতে একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের আইনগত সহযোগিতা না পাওয়া এবং অবকাঠামোগত দুর্বলতার কারণেই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হচ্ছে না।

রাজধানীর বনানীতে পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউটের (পিআরআই) কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার ‘ফাইন্যান্সিং সলিউশন ফর মাইক্রো, স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজেস ইন বাংলাদেশ : ফাইন্ডিংস অ্যান্ড প্রস্পেক্টিভস’ শীর্ষক কর্মশালায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। পিআরআইয়ের চেয়ারম্যান ড. জাইদি ছাত্তারের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসএম মনিরুজ্জামান।

পিআরআই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত অনুযায়ী, বৃহৎ উদ্যোক্তারা যেখানে তাদের ব্যবসা পরিচালনার জন্য ব্যাংক ঋণ সুবিধা পান ৪৪ শতাংশ। সেখানে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা তাদের ব্যবসা নিজেদের সামর্থ্যইে বড় করে তোলেন। তারা ব্যাংক ঋণ সুবিধা পান মাত্র ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ, যা একটি বড় ধরনের বৈষম্য। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে সিংহভাগ বিনিয়োগ করে সরকারি ব্যাংক। বেসরকারি ব্যাংকের বিনিয়োগ মাত্র ২৭ শতাংশ এবং বিদেশি ব্যাংকের সাড়ে ৯ শতাংশ।

দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকেও এ বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানায় পিআরআই। তারা জানায়, মিসিং মিডলের কারণে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা বেশিরভাগ সময় টাকার অভাব অনুভব করেন। বড় অঙ্কের ব্যাংক ঋণগ্রহীতারা যত সহজে ঋণ নিতে পারেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের তার চেয়ে অনেক বেশি বাধা অতিক্রম করতে হয়। এ বৈষম্যকে মূলত মিসিং মিডিল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম বলেন, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের টাকার প্রয়োজন হলে সবার আগে এনজিও অথবা দালালদের কাছে যান। তারা ব্যাংক ঋণ নেন না কেন একথা জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন, ‘আমাদের টাকার প্রয়োজন নেই।’ আমি চিন্তা করে দেখেছি, বিভিন্ন ধরনের তথ্য এবং কাগজপত্র চাওয়ার কারণে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে ভয় পান ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগকারীরা। এছাড়া একটি ব্যাংকের ক্ষেত্রে ভালো ক্ষুদ্র গ্রাহক খুঁজে বের করা অনেক কঠিন, সে কারণে তারা না বুঝে কোনো ঝুঁকি নিতে চায় না। তবে গবেষণায় আরও ভালো কোনো প্রক্রিয়া উঠে আসলে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের এ খাতে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত সরকার। ডেপুটি গভর্নর মনিরুজ্জামান বলেন, এ খাতের উন্নতি না হওয়ার অন্যতম কারণ তথ্য ঘাটতি।

অল্প টাকার জন্য বেশি সময় ব্যয় করতে আগ্রহ প্রকাশ করে না কোনো ব্যাংকই। তার পরেও বেশিরভাগ ব্যাংকই তাদের এসএমই ঋণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করছে বলে জানান তিনি। এছাড়াও আরও একটি সমস্যা হল জামানতবিহীন ঋণের সুযোগ কম। নারীদের ক্ষেত্রে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন ঋণের সুযোগ থাকলেও পুরুষের ক্ষেত্রে তা নেই। আবার সব জায়গাতে এ পদ্ধতি ঠিকমতো কাজ করছে না বলে মনে করেন মনিরুজ্জামান। এ বিষয়ে আইডিএলসি ফাইন্যান্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ খান বলেন, বাংলাদেশে এসএমইর সংজ্ঞাতেই বড় ধরনের সমস্যা। এসএমই সম্পর্কে এখনও অন্ধকারে আছে আমাদের দেশ।

এখানে বিনিয়োগ করে অনেক বেশি লাভ করা যায় তার উদাহরণ আমার প্রতিষ্ঠান। তাই দেশের সার্বিক উন্নয়নে এসএমই খাতে আরও বেশি গুরুত্ব দেয়া দরকার। এ বিষয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের এসএমই বিভাগের প্রধান বাস্তবিক অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণের প্রক্রিয়া আরও সহজ করা দরকার। কারণ একটা ঋণ নিতে গেলে আগের বছরের ব্যবসা চিত্র, ব্যাংকিং লেনদেন, ট্যাক্সের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাওয়া হয়, যেগুলো দিতে একেবারেই প্রস্তুত থাকেন না বেশিরভাগ ক্ষুদ্র গ্রাহক। এ বিষয়টা গুরুত্বের সঙ্গে দেখলে এবং কিছু পরিবর্তন আনলে আরও সামনে আগাবে বলে মনে করে ব্র্যাক ব্যাংক।

সম্পর্কিত পোস্ট

Add Comment

অন্যান্য সংবাদ

নিউজলেটার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন

আপনার ইনবক্সে সেরা খবর পেতে সাবস্ক্রাইব করুন । আমরা আপনাকে স্প্যাম করব না এবং আমরা আপনার গোপনীয়তাকে সম্মান করি।