কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নীতিমালা

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক দুটি বিশেষ নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। নীতিমালা দুটি জারি করে বৃহস্পতিবার তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ দুই নীতিমালায় ব্যাংকগুলোর ভালো গ্রাহকদের জন্য ভালো সুবিধা এবং ঋণখেলাপিদের জন্য প্যাকেজ ছাড়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
নীতিমালা অনুযায়ী ঋণের নিয়মিত কিস্তি পরিশোধ করলে গ্রাহকরা বছর শেষে মোট সুদের ওপর ১০ শতাংশ ছাড় পাবেন। এছাড়া প্রতি বছর সেরা ১০ গ্রাহকের ছবিসহ বুকলেট বা ম্যাগাজিন প্রকাশ করতে হবে। ব্যাংকের বার্ষিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের দিতে হবে সম্মাননা সনদ ও ভালো গ্রাহকের স্বীকৃতি হিসেবে পুরস্কার।
নীতিমালায় আরও রয়েছে, এসব সুবিধা পেতে ভালো গ্রাহককে কোনো আবেদন করতে হবে না, ব্যাংক স্বপ্রণোদিত হয়েই ভালো গ্রাহক চিহ্নিত করে তাদের মূল্যায়নের ব্যবস্থা করবে।
অন্যদিকে দ্বিতীয় নীতিমালায় বলা হয়েছে, ঋণখেলাপিদের জন্য দেয়া বিশেষ সুবিধা পেতে হলে খেলাপি গ্রাহককে ব্যাংকের কাছে আবেদন করতে হবে। এখন থেকে ৯০ দিনের মধ্যে এই সুবিধা পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কাছে আবেদন জমা দিতে হবে। সব ক্ষেত্রেই সুবিধা নির্ধারিত হবে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে।
নীতিমালায় রয়েছে, ঋণ স্থিতির ওপর ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ নবায়ন করা যাবে, ঋণ পরিশোধের জন্য গ্রেস পিরিয়ড হিসেবে ১ বছর সময় পাওয়া যাবে এবং সর্বোচ্চ ১০ বছরের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করতে হবে। তবে জারিকৃত নীতিমালায় বেঁধে দেয়া শর্তগুলো কেউ অমান্য করলে তার ক্ষেত্রে এ সুবিধা বহাল থাকবে না।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের এ দুই নীতিমালার পেছনে কাজ করেছে খোদ প্রধানমন্ত্রীর চিন্তা। এই চিন্তা যে দূরদর্শী তা বলার অপেক্ষা রাখে না। খেলাপি ঋণ বর্তমানে এক সাধারণ সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। খেলাপি ঋণের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়েছে ব্যাংকগুলো।
আশা করা যায়, নতুন নীতিমালা খেলাপি ঋণ সংস্কৃতিতে আমূল ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। এতে ভালো গ্রাহকরা যেমন উপকৃত হবেন, তেমনি তারা ভালো গ্রাহকের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রাখতে উৎসাহিত হবেন। তারা একদিকে আর্থিক সুবিধা পাবেন যেমন, তেমনি সামাজিকভাবে তাদের স্বীকৃতি ও পুরস্কার প্রদান করা হলে তারা বেশি করে প্রণোদিত হবেন।
অন্যদিকে যারা এখন ঋণখেলাপি, তারাও ভবিষ্যতে ভালো গ্রাহক হওয়ার চেষ্টা করবেন। এ দফায় সুযোগ গ্রহণ করে তারা ভালোভাবে ব্যবসা বা প্রকল্প চালিয়ে যেতে পারবেন এবং নিয়মিতভাবে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে উৎসাহিত হবেন।
এককথায়, এতে খেলাপি ঋণ কমে যাবে, আর্থিক খাতে বাড়বে ভালো ঋণগ্রহীতার সংখ্যা। বলাবাহুল্য, এ সবকিছুর একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে ব্যাংকগুলোর ওপর, অর্থনীতিতে গড়ে উঠবে চাঙ্গা ভাব।
এতদিন ধরে খেলাপি ঋণের ব্যাপারে অনেক কথা উচ্চারিত হয়েছে। ব্যাংকগুলোর দৈন্যদশার জন্য খেলাপি ঋণকে দায়ী করে খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতির বিশেষজ্ঞরা। এই প্রথম দুটি বাস্তবভিত্তিক নীতিমালা পাওয়া গেছে।
আশা করা যায়, এখন থেকে ব্যাংকিং খাতে গড়ে উঠবে নতুন সংস্কৃতি। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ দেয়া যায়। বাংলাদেশ ব্যাংককে দীর্ঘদিনের বন্ধ্যত্ব কাটিয়ে ওঠার ব্যাপারে সহায়তা করেছেন তিনি।
Add Comment