কৃষকের তালিকা জটিলতায় গম কেনায় ধীরগতি

সরকারিভাবে গম কেনা বা সংগ্রহ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরুর কথা ছিল ১ এপ্রিল থেকে। কিন্তু রাজশাহী অঞ্চলের অনেক খাদ্য গুদামে এখনও গম কেনা শুরুই হয়নি। খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা বলছেন, এবার সরকারিভাবে গম কেনা নীতিমালায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে।
গত কয়েক বছর ধরে স্থানীয়ভাবে গঠিত ক্রয় কমিটির উপদেষ্টা ছিলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানরা। এবার তা পরিবর্তন করে স্থানীয় সংসদ সদস্যকে উপদেষ্টা করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে গঠিত ক্রয় কমিটি কৃষকের যে তালিকা দেবেন খাদ্য বিভাগ সেইসব কৃষকেরই গম কিনবেন। গত এক মাসেও খাদ্য বিভাগ অধিকাংশ এলাকায় কৃষকের তালিকা হাতে পায়নি।
ফলে সরকারিভাবে গম কেনাও শুরু করতে পারেননি তারা। রাজশাহী বিভাগ ছাড়াও দেশের অন্যান্য এলাকাতেও গম কেনায় একই জটিলতা চলছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ৩০ জুন পর্যন্ত গম কেনা চলবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারিভাবে প্রতি কেজি ২৮ টাকা দরে এবার কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি গম কেনার নির্দেশ দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। চলতি মৌসুমে রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলায় ২১ হাজার ৫০৩ মেট্রিক টন গম কেনার লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে। ১ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে ১৬ মে পর্যন্ত রাজশাহী বিভাগের ৪৯টি গুদামের মধ্যে মাত্র ১৪টিতে কেনা হয়েছে ১ হাজার ৯৫৬ মেট্রিক টন গম। বাকি ৩৫টি গুদামে এখনও গম কেনা শুরু হয়নি। এই সংগ্রহ মোট লক্ষ্যমাত্রার ৮ শতাংশেরও কম।
এদিকে রাজশাহী বিভাগের রাজশাহী ও নাটোর জেলায় মঙ্গলবার পর্যন্ত গম কেনা শুরু হয়নি বলে জানিয়েছেন সহকারী আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোমিনুল ইসলাম। তিনি জানান, রাজশাহী জেলায় ৩ হাজার ৮৭ মেট্রিক টন ও নাটোর জেলায় ২ হাজার ৬৫৫ মেট্রিক টন গম কেনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। অন্যদিকে নওগাঁ জেলায় ৩ হাজার ৮১২ টনের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে কেনা হয়েছে মাত্র ৮৮ টন। পাবনায় ৩ হাজার ৩৭১, সিরাজগঞ্জে ২ হাজার ১৫১, বগুড়ায় ১ হাজার ২৭১, জয়পুরহাটে ১ হাজার ৭৮৬ টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে চার জেলায় কেনা হয়েছে মোট ১ হাজার ৭৪১ টন। এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৩ হাজার ২৭১ মেট্রিক টনের বিপরীতে কেনা হয়েছে ১৩৮ টন। মূলত প্রকৃত কৃষকের তালিকা জটিলতাতেই গম ক্রয়ে এই ধীরগতি বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে রাজশাহীর সহকারী আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক দফতর সূত্রে আরও জানা গেছে, গম কেনায় এই ধীরগতির কারণে তাদের ওপর চাপ বাড়ছে। কৃষকের তালিকা কৃষি বিভাগ থেকে তৈরি হয়ে উপজেলা ক্রয় কমিটির মাধ্যমে খাদ্য গুদামে পাঠানোর কথা। কিন্তু রাজশাহী বিভাগের অনেক উপজেলায় এখনও কৃষকের তালিকা দেয়া হয়নি। ফলে অনেক গুদামে গম ক্রয় শুরু করা যায়নি।
অন্যদিকে খাদ্য বিভাগের রাজশাহী অঞ্চলের একাধিক গুদাম কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খাদ্যমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশ রয়েছে এবার প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকে গম কেনা নিশ্চিত করতে।
কিন্তু কৃষি বিভাগসহ ক্রয় কমিটিকে বারবার তাগিদ দেয়ার পরও কৃষকের তালিকা তারা পাননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন গুদাম কর্মকর্তা জানান, ক্রয় কমিটির উপদেষ্টা স্থানীয় সংসদ সদস্য হওয়ায় তাদের অনেকেই ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে গম কেনার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে। কৃষকের ভুয়া তালিকাতেই গম কেনার জন্য স্থানীয় নেতারাও চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রেখেছেন।
এদিকে রাজশাহীর তানোরের কৃষক শরিফুল ইসলাম, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের কৃষক জুয়েল বলেন, গত কয়েক বছর ধরে গম কেনায় প্রকাশ্যে দুর্নীতি হয়েছে। দু’একজন ব্যতিক্রম ছাড়া প্রকৃত কৃষকরা সরকারি গুদামে গম বেচতে পারেননি। ব্যবসায়ী ফড়িয়া ও দালালরাই গম দিয়েছে। এবারও শেষ সময়ে তেমনটাই হওয়ার আশঙ্কায় গম কেনায় জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে পরিকল্পিতভাবে।
Add Comment