এসডিজি অর্জনে এলজিইডির বড় ভূমিকা রয়েছে

২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে স্থানীয় সরকারের কার্যকর ভূমিকা এবং স্থানীয় সরকারের সংস্থাগুলোর সংস্কার ও উন্নয়ন নিশ্চিত করার কথা বলেছেন বক্তারা।
বুধবার রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সেমিনারে স্থানীয় সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। তারা বলেছেন, ২০১৫ সালের আগস্টে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৯৩টি দেশই ১৭টি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় একমত হড।
এসব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে স্থানীয় সরকার বিভাগের বড় ভূমিকা রয়েছে। সেজন্য স্থানীয় সরকারের ৫টি স্তরকে ঢেলে সাজাতে হবে। তারা বলেছেন, এসডিজির মূল বিষয় বা দারিদ্রত নিরসন, ক্ষুধা মুক্ত, মানসম্মত শিক্ষা, নারী ও পুরুষ সমতা, সুপেয় পানি ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা, সাশ্রয়ী ও দূষণমুক্ত জ্বালানি, মানসম্মত কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিল্পায়ন, উদ্ভাবন ও উন্নত অবকাঠামো, বৈষম্য হ্রাস, টেকসই নগর ও সমাজ গড়ে তোলা, সম্পদের দায়িত্বপূর্ণ ব্যবহার ও উৎপাদন, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পদক্ষেপ গ্রহণ, জলজ সম্পদের টেকসই ব্যবহার, শান্তি, ন্যায় বিচার ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং লক্ষ্যপূরণে বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে। মাদারীপুর পৌরসভার মেয়র খালিদ হোসেন ইয়াদ বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বেশ কিছু বৈষম্য রয়েছে।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত সালিশি কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারলেও পৌর মেয়ররা পারেন ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এটা মেনে নেয়া যায় না। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারের ৫টি স্তরে ৫ ধরনের আইন আছে। কিন্তু, কোনো মাদার আইন নেই, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যপূরণ করতে একটি মাদার আইন করা প্রয়োজন। আর স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বাৎসরিক সম্মেলনের আয়োজন করা এবং স্থানীয় সরকার কমিশন করার বিষয়ে ভাবতে হবে।
এসব উদ্যোগ গ্রহণ করে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা না গেলে, এসজিডির কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছানো দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র বিদ্যমান থাকলেও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠাগুলোতে রাষ্ট্রপতি শাসিত পদ্ধতি বহাল রয়েছে। বিদ্যমান এসব ত্রুটি সংস্কার করে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে গতিশীল করতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠানের সার্বিক সক্ষমতা বাড়াতে প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
সিপিডির ডিস্টিংগুইশড ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আমরা সিপিডির পক্ষ থেকে এসডিজি অর্জনের জন্য যেসব সংস্কার ও কর্মপন্থা গ্রহণ করা দরকার, সেসব বিষয়ে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তবে একটি গবেষণায় সবকিছু তুলে ধরা সম্ভব নয়, আমরা এ ব্যাপারে আরও গবেষণা করতে চাই। আমরা আমাদের গবেষণার মাধ্যমে সরকারকে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণে সহযোগিতা করতে চাই।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেন, সিপিডি একটি গবেষণার মাধ্যমে এসডিজি বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকারের দুর্বলতা তুলে ধরায় আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছি। তবে আমি সিপিডির কাছে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ চাইব, এজন্য তারা আরও গবেষণা করলে আমিও তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।
তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোকে শক্তিশালী করতে আমরা নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এরপরও নানা প্রতিবন্ধকতায় অনেক ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত সাফল্য আসছে না। আমরা সেসব সমস্যার সমাধান করে দেশকে উন্নত করতে স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোর কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
সিপিডির ডিস্টিংগুইশড ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনায় সেমিনারে লিখিত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, সিপিডির দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য ও সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট উম্মে শেফা রেজবানা। এছাড়াও সেমিনারের উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন বিভিন্ন পেশাজীবী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
Add Comment