উপেক্ষিত উচ্চ আদালতের রায়

Post Iamge

Advertise

গত বছরের ৩ ডিসেম্বর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণীর ছাত্রী অরিত্রি অধিকারীকে পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোন সঙ্গে নেয়ার অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়।

এরপর স্কুল কর্তৃপক্ষ ওই ছাত্রীর বাবা-মাকে ডেকে পাঠালে তারা মেয়ের হয়ে দফায় দফায় ক্ষমা চান। কিন্তু এরপরও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তাদের অপমান করেন এবং স্কুল থেকে অরিত্রি অধিকারীকে ছাড়পত্র দেয়ার ঘোষণা দেন। নিজের সামনে বাবা-মায়ের এমন অপমান সইতে না পেরে ওইদিন শান্তিনগরের বাসায় ফিরে গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে ওই ছাত্রী।

ওই ঘটনার জেরে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠে বেইলি রোডে ভিকারুননিসার ক্যাম্পাস। এসময় অধ্যক্ষের পদত্যাগ ও তাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার দায়ে শাস্তিসহ ছয় দফা দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা।

অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যার মামলায় গ্রেফতার হন শ্রেণী শিক্ষক হাসনা হেনা। পরে তিনি জামিন পান। অরিত্রির আত্মহত্যার ঘটনায় গঠিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের সারাংশ তুলে ধরে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, অভিযুক্তরা মানসিকভাবে অরিত্রিকে বিপর্যস্ত করে তোলে এবং তাকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে। এ জন্য কমিটি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলেছে।

এদিকে নিজের চোখের সামনে বাবা-মায়ের অপমান সইতে না পেরে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ছাত্রী অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যার ঘটনা নজরে আনা হলে বিষয়টিকে হৃদয়বিদারক বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট। বর্তমানে রিটটি হাইকোর্টে শুনানির পর্যায়ে রয়েছে। অরিত্রি অধিকারীর আত্মহত্যার মতো এমন অনেক ঘটনা সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অহরহ ঘটছে।

 

জানা যায়, দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থী সংক্রান্ত বিভিন্ন আদেশ, রায় ও নির্দেশনা দেন উচ্চ আদালত। কিন্তু এসব নির্দেশনা আদতে পুরোপুরি পালন ও বাস্তবায়ন হয় না। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রতিনিয়ত উদাসীনতা, নিষ্ক্রিয়তা ও অবহেলার পরিচয় দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন আইন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, রাজনৈতিক মদদপুষ্ট প্রভাবশালীদের কারণে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। যদিও সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশনা পালন সবার জন্য বাধ্যতামূলক এবং তা অবজ্ঞা করা হলে সেটি হবে আদালত অবমাননার শামিল।

এ বিষয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, জনস্বার্থে অনেক রায় ও আদেশ দিলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এর বাস্তবায়ন দেখছি না। যদিও সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশনা পালন সবার জন্য বাধ্যতামূলক এবং তা অবজ্ঞা করা হলে সেটি হবে আদালত অবমাননার শামিল।

শারীরিক ও মানসিক শাস্তি নিষিদ্ধ : শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি নিষিদ্ধ করে ২০১১ সালে হাইকোর্ট রায় দেন। একই বছর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়ন করে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আদেশ জারি করে। ২০১৩ সালের শিশু আইনের ৭০ ধারাতেও শিশুকে আঘাত বা অবহেলাসহ মানসিক বিকৃতির শিকার হলে তাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হল শিশুদের প্রতি এ ধরনের নিষ্ঠুরতার অবসান হয়নি।

কোচিং বাণিজ্য নিষিদ্ধ : ৭ ফেব্রুয়ারি শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধে সরকারের জারি করা নীতিমালাকে বৈধ ঘোষণা করে এ রায় দেন হাইকোর্ট। নীতিমালায় বলা হয়েছে, কোনো শিক্ষক তার নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে কোচিং করাতে পারবেন না। প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতিসাপেক্ষে অন্য প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ ১০ শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতে পারবেন। বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এ রায় দেন। কিন্তু সবক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের এ রায় বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

শিশুর ঘাড়ে বইয়ের বোঝা : ২০১৬ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রাথমিক স্কুলের শিশুদের শরীরের ওজনের ১০ শতাংশের বেশি ভারি স্কুলব্যাগ বহন নিষেধ করে সুনির্দিষ্ট একটি আইন প্রণয়ন করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। রায় পাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে আইন করতে আইন সচিব, শিক্ষা সচিব, গণশিক্ষা সচিবসহ বিবাদীদের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়।

বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশনাসহ এ রায় দেন। রায়ে আইন হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রাথমিকে যাওয়া শিশুদের শরীরের ওজনের ১০ শতাংশের বেশি ওজনের ব্যাগ বহন করা যাবে না বলে নতুন করে একটি সার্কুলার জারি করতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দেয়া হয়। ৩০ দিনের মধ্যে এই সার্কুলার জারি করতে বলা হয়। সরেজমিন দেখা গেছে, বিভিন্ন বেসরকারি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের প্রকাশিত বাহারি নামের চটকদার বই পাঠ্যভুক্ত করা হয়েছে। প্রত্যেকটি বইয়ের আবার চড়া দাম। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ২০-২৫ পৃষ্ঠার বই ৪-৫শ’ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।

শিক্ষাঙ্গনে যৌন হয়রানি : শিক্ষাঙ্গনে যৌন হয়রানি, সহিংসতা রোধে ২০১০ সালে একটি নীতিমালা করে দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এতে বলা হয়েছিল, যতদিন পর্যন্ত যৌন হয়রানির কোনো আইন পাস না হবে ততদিন পর্যন্ত হাইকোর্টের এ নীতিমালা অনুসরণ করা হবে। এদিকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে কমিটি করা হয়েছে কিনা জানতে চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়েছে। ২৯ এপ্রিল আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ রিটটি দায়ের করেন।

সম্পর্কিত পোস্ট

Add Comment

অন্যান্য সংবাদ

নিউজলেটার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন

আপনার ইনবক্সে সেরা খবর পেতে সাবস্ক্রাইব করুন । আমরা আপনাকে স্প্যাম করব না এবং আমরা আপনার গোপনীয়তাকে সম্মান করি।