আমার অস্তিত্বে মিশে আছেন যিনি

দেখতে দেখতে চলে গেল ৩৬৫ দিন। স্বাভাবিকভাবে ৩৬৫ দিন অর্থাৎ এক বছর কম সময় হলেও আমার কাছে দীর্ঘসময়। আজকের এই দিন আমার সবচেয়ে কষ্টের দিন।
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আপনজন ‘মা’ হারানোর দিন আজ। আমার জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে যিনি ছিলেন অপরিহার্য, সেই মা আজ নেই। আমার সব কাজের প্রেরণা ও উৎসাহ জোগাতেন যিনি এবং আমি যে কোনো কাজে বের হওয়ার আগে যাকে সালাম করে দোয়া নিয়ে বের হতাম, সেই মায়ের মুখ দেখি না ৩৬৫ দিন। ২০১৮ সালের ১৫ মে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন না-ফেরার দেশে।
পৃথিবীতে সব মা সব সন্তানের সবচেয়ে বেশি আপন ও প্রিয়। মা নিজে না খেয়ে সন্তানকে বাঁচিয়ে রাখেন। কিন্তু আমার মা আমার জন্য এর চেয়েও অনেক বেশি করেছেন।
যত দূর মনে পড়ে, ছোটবেলায় (’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়) আমার মা আমাকে ও ছোট ভাই আমিনকে নিয়ে সারা দিন চিৎকার করে কাঁদতেন।
কারণ আমার বাবা প্রকৌশলী আবুল হাসেম মিয়া মহান মুক্তিযুদ্ধে নিখোঁজ ছিলেন। তিনি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে চাকরিরত অবস্থা থেকেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। ৬ মাস পর বাবা ফিরেও আসেন। তখন বাংলাদেশ স্বাধীন। এই ছয় মাসই মা প্রতিদিন চিৎকার করে কাঁদতেন আমাদের দুই ভাইকে বুকে নিয়ে।
আমি ছাত্র রাজনীতি করার কারণে বাবার সরকারি চাকরিতে প্রায়ই সমস্যা হতো। কারণ ’৮৪ থেকে ’৯৬ পর্যন্ত আমি জাকসু ভিপি, ছাত্রলীগের সহসভাপতি এবং সর্বশেষ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি।
তখন বিরোধী দলের রাজনীতি করতাম। আমাদের রামপুরার বাসায় ছিল ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদর অবাধ যাতায়াত। ছাত্রলীগের প্রত্যেক নেতাকর্মীর কাছেই আমার মা ছিলেন সবার মা। মা আমাদের যেমন আদর-যত্ন করতেন, ঠিক তেমনি প্রত্যেক ছাত্রলীগ নেতকর্মীকেও ভালোবাসতেন। কখনও কখনও গভীর রাতে বাড়ি ফিরতাম। এসে দেখি মা আমার অপেক্ষায় বসে আছেন।
কখনও তার মুখে বিরক্তির ছাপ দেখিনি। ছাত্র রাজনীতি ও জাতীয় রাজনীতিতে সব সংকটেই আমাকে ভরসা দিতেন তিনি। আমার মা সবসময় বলতেন, আমার ছেলে বড় হবেই। মা’র সব স্বপ্নই ছিল আমাকে ঘিরে। মায়ের স্বপ্ন আজ পূরণ হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আমাকে এমপি ও মন্ত্রী বানিয়েছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য, আমার মা তা দেখে যেতে পারলেন না। আজ আমার অবস্থান দেখে মা সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন।
আমার সব বিষয়েই মা ছিলেন পরামর্শদাতা, সুখ-দুঃখ সবকিছুই বলতাম মাকে। আমার চিন্তা-চেতনায়, অস্তিত্বে মাকে ছাড়া আমি কিছুই ভাবতে পারি না। আমার মা বেশির ভাগ সময়ই থাকতেন জায়নামাজে, রোজা রাখতেন প্রতি সপ্তাহেই। মানুষের উপকার করাই ছিল মায়ের একমাত্র লক্ষ্য। মা ছিলেন পরম দানশীল।
মায়ের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে আমি সবার কাছে তার জন্য দোয়া চাইছি। আল্লাহ যেন আমার মা আশ্রাফুননেসাকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব করেন এবং তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সততার সঙ্গে কাজ করার তৌফিক দান করেন আমাকে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতির জনকের সোনার বাংলা গড়ার গর্বিত অংশীদার যেন হতে পারি।
এনামুল হক শামীম : পানিসম্পদ উপমন্ত্রী; সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
Add Comment