অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শান্তি ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ এখন একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও শান্তিপ্রিয় দেশ। দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা যেন বজায় থাকে সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সবার সহযোগিতা কামনা করছি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে পেশাজীবীদের জন্য আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও শিক্ষক, বিভিন্ন সংবাদপত্র, সংবাদ সংস্থা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সম্পাদক ও সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ডিপ্লোমা প্রকৌশলী, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী, সাহিত্যিক, কবি, লেখক, সঙ্গীতশিল্পী এবং ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব উপস্থিত ছিলেন।
ইফতারের আগে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নতি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ১৫ আগস্টে শহীদ এবং মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের আত্মার শান্তি কামনার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করা হয়।
প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে ইফতার অনুষ্ঠানে আসা অতিথিদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ প্রচণ্ড গরমেও আপনারা গণভবনে এসেছেন, গণভবনের মাটি ধন্য হয়েছে আপনাদের পদার্পণে। সেজন্য আমি এখানে উপস্থিত শিক্ষক, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, কৃষিবিদ, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বিশিষ্ট নাগরিকগণ সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
আমন্ত্রিত অতিথিরা বিকাল ৩টা থেকে গণভবনে আসতে শুরু করেন। সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে গণভবন প্রাঙ্গণের বিশাল প্যান্ডেল ভরে যায়। সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটে ইফতার অনুষ্ঠানে আসেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি সবার উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। অসুস্থতার কারণে আমন্ত্রিত অতিথিদের টেবিল ঘুরে ঘুরে দেখতে পারেনি বলে দুঃখ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
মাহে রমজানের শুভেচ্ছা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দোয়া করবেন যেন উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। দেশের মানুষ আমাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছে বলেই বাংলাদেশের উন্নয়ন হচ্ছে। তিনি বলেন, রমজান মাসে দোয়া করলে সেই দোয়া কবুল হয়।
এইটুকু বলব, বাংলাদেশে যেন সব সময় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় থাকে। দেশের যে উন্নয়নের ধারা সূচিত হয়েছে আমরা তা যেন অব্যাহত রাখতে পারি। বাংলাদেশের একেবারে গ্রামের মানুষও যেন সুন্দর ও উন্নত, সুস্থ জীবন পায়, আমরা সেটাই কামনা করি, সে প্রচেষ্টাই আমরা করে যাচ্ছি।
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতা অর্জনের পর মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ সময় তিনি অসাধ্যকে সাধ্য করেছিলেন।
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলতে তিনি (বঙ্গবন্ধু) উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য আমাদের সেই উন্নয়নের ধারা ব্যাহত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে। আমরা আমাদের পিতাকে হারাই, আর জাতি হারিয়েছিল তাদের জীবনমান উন্নয়নের সম্ভাবনাকে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, সাধারণ মানুষের জন্য জাতির পিতা সারাটা জীবন সংগ্রাম করেছিলেন, দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে যে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন সেই স্বাধীনতার সুফলটা যাতে এ দেশের মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছতে পারে সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যাতে ক্ষুধা দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পায়, শোষণ-বঞ্চনা থেকে মুক্তি পায়, উন্নত জীবন পায়, ধ্বংসের মাঝে যেন আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যেন বাংলাদেশ গড়ে ওঠে সে প্রচেষ্টাই আমরা চালিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমরা দেশের মানুষের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি। সাধারণ মানুষ আমাদের ওপর যে আস্থা বিশ্বাস রেখেছে সেটা যেন সব সময় অব্যাহত থাকে। একই সঙ্গে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখে জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারি।
জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজকে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস যেমন সারা বিশ্বব্যাপী সমস্যা, বাংলাদেশেও সে প্রচেষ্টা চলেছে।
আইনশৃঙ্খলা সংস্থাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, পুলিশ, র্যাবসহ সব বাহিনীর সদস্যরা এ দেশের মানুষের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তাদের এ অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আজ আমরা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ দমন করতে সফল হয়েছি।
ইফতার মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, বিচারপতি মেজবাউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা ডা. মোদাচ্ছের আলী, প্রকৌশলী ড. শামিমুজ্জামান বসুনিয়া, কৃষিবিদ মীর্জা আবদুল জলিল, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম।
এছাড়া কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, তথ্যপ্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান, নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্বের মধ্যে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও যুগান্তর পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, আমাদের নতুন সময়ের সম্পাদক নাইমুল ইসলাম খান, একাত্তর টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল বাবু, বিএফইউজে- বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোল্লা জালাল, সিনিয়র সহ-সভাপতি ওমর ফারুক, মহাসচিব শাবান মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।
বিশিষ্ট নাগরিকদের মধ্যে সৈয়দ হাসান ইমাম, চিকিৎসক ইকবাল আর্সনাল, চিত্রনায়ক ফেরদৌস, চিত্রনায়িকা শমী কায়সার, বিশিষ্ট আইনজীবী বাসেদ মজুমদার, বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ডা. প্রাণ গোপাল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. মিজানুর রহমান, বেগম রোকেয়া বিশ্বাবিদ্যালয়ের ভিসি ড. কলিমুল্লাহ, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. শহীদুল্লাহ সিকদার উপস্থিত ছিলেন। বিশিষ্ট ব্যবসায়ীদের কাজী আকরাম, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম আতিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ, ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, অর্থনীতি পরিষদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, আওয়ামী বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘর, আইসিটি ফোরাম, এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ এবং সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের নেতারা ইফতার মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন।
Add Comment